বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোজায় বাজার স্বাভাবিক থাকবে কি

  •    
  • ১৪ মার্চ, ২০২২ ১০:১৬

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গত দুই বছরে মোটা দানার মসুর ডাল ৬৩, চিনি ৩২, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫৫, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।

বাজারে বাড়ছে উত্তাপ। রমজান মাসকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে নানান পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত কোনো কিছুই কাজে আসছে না।

এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে মধ্যবিত্তের মানুষও হিমশিম খাচ্ছেন বাজারে গিয়ে। বলছেন, আয় না বাড়লেও কয়েক গুণ খরচ বেড়েছে।

রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, ডাল, পোলাওয়ের চাল ও মাংসের। রোজার ১৫ দিন বাকি থাকতেই এসব পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে।

পণ্যের দাম ক্রেতাদের কাছে সহনীয় রাখতে কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক পণ্যের সরবরাহ চ্যানেল নিরবচ্ছিন্ন করার ওপর জোর দেন। সে সঙ্গে বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, অতি মুনাফা প্রবণতা দমনে কঠোর তদারকির কথা বলেন তিনি।

ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যতালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গত দুই বছরে মোটা দানার মসুর ডাল ৬৩, চিনি ৩২, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫৫, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।

ভোজ্য তেল সয়াবিন

গত মাসের প্রথম দিকে ভোজ্য তেল সয়াবিনের লিটারে ১২ টাকা নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে ব্যবসায়ীরা। সে প্রস্তাবে সরকার না কলে দিলে বাজারে তৈরি হয় কৃত্রিম সংকট। তখন থেকেই হু হু করে সারা দেশে বাড়তে থাকে তেলের দাম।

গেল ৬ ফেব্রুয়ারি ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৬৮ এবং খোলা সয়াবিনের দাম বেঁধে দেয়া হয় ১৪০ টাকা। আর পাম অয়েল প্রতি লিটার ১৩৩ টাকা।

অথচ ক্রেতাদের অভিযোগ, তারা কোনো তেলই ২০০ টাকা লিটারের কমে কিনতে পারছেন না। এমনকি খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কাছেও পাইকারি বিক্রেতারা দাম নিচ্ছেন বেশি।

এ জন্য ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারে তেলের দামের অজুহাত দিচ্ছেন। গত বছর বিশ্ববাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ২৩৫ ডলার। এখন সেটি ১ হাজার ৯৩০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যেহেতু ভোজ্য তেলে প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর, তাই বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গেই দেশে দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, দেশে প্রতিবছর ভোজ্য তেলের চাহিদা গড়ে ২০ লাখ টন। সে হিসাবে মাসে চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। আর রমজানে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টন।

সরিষার তেল

সয়াবিনের পাশাপাশি হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে সরিষার তেলের। বাজারে রাঁধুনী ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার সরিষার তেল ২৯৫ টাকা, প্রাণের ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমার ফোরামের বাজারদর গবেষণার তথ্য বলছে, এক মাস আগেও রাঁধুনীর সরিষার তেলের দাম ছিল ২৮০ টাকা। সেই হিসাবে বছর ব্যবধানে তাদের তেলের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ।

স্বাদ ব্র্যান্ডের সরিষার তেল এখন ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা লিটার, দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।

সরিষার তেলের বার্ষিক চাহিদা কত তার অবশ্য সঠিক কোনো হিসাব নেই। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশে বছরে সরিষার তেল উৎপাদন হয় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন, বিপরীতে চাহিদা অনেক বেশি।

বাংলাদেশ অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, সয়াবিন তেলের ওপর সরকারের বেশি গুরুত্বারোপের কারণে সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়েনি।

তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলে শুল্ক ছাড়সহ শিল্প স্থাপনে নানা সুবিধা দিলেও সরিষা উৎপাদনকারীরা তেমন সুবিধা পায়নি। অনেক উদ্যোক্তাই এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। চাহিদা বাড়তে থাকায় নতুনরা অবশ্য ব্যবসায়ে নামছে।’

খেজুর

রোজার আগেই বেড়েছে খেজুরের দাম। কয়েক দিন খুচরাপর্যায়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কিছুটা নিম্নমানের খেজুর এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। অপেক্ষাকৃত ভালো মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। কিছুদিন আগে এই খেজুরের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আড়তে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে আমরা যে খেজুর ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, তা এখন ২৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।’

ডাল

গত তিন-চার মাসে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, আমদানি করা মসুর ডালের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং দেশি মসুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুগ ডালের কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ এবং অ্যাঙ্কর ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মসুর, খেসারি, মাষকলাই, মটর, মুগ, ছোলাসহ ডালজাতীয় ফসলের মোট উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ২১০ টন। এই উৎপাদন আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার টন কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার টন।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৮৭ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে সব ধরনের ডালের চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। দেশে গড়ে উৎপাদন ৯-১০ লাখ টন। আর বাকি প্রায় ১৭ লাখ টন ডাল আমদানি করতে হয়।

চিনি

কয়েক মাস স্থির থাকার পর আবার বেড়েছে চিনির দাম। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছিল ৭৫-৭৬ টাকায়, ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এবং টিসিবির হিসাবে বছরে দেশে চিনির চাহিদা ১৫ থেকে ১৭ লাখ টন। মোট চাহিদার এক থেকে দেড় লাখ টন চিনির জোগান আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি কারখানা থেকে। তা ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় সরকার টিসিবির মাধ্যমেও কিছু চিনি আমদানি করে। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ চিনির জোগান আসে সরকারিভাবে। বাকি চিনির জোগান আসে বেসরকারি কারখানা থেকে।

ছোলা

রমজানকে সামনে রেখে গত এক-দু মাসেই ছোলার দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, কয়েক দিন আগেও এটি ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, দেশে বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন ছোলার প্রয়োজন হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছোলা উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬৭৬ টন। আর সারা বছর যে পরিমাণ ছোলার প্রয়োজন হয়, তার অর্ধেকই লাগে রমজানে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, রোজার মাসে দেশে ছোলার চাহিদা ৮০ হাজার টন।

ছোলার অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। রোজায় বাড়তি চাহিদার কারণে মাঝেমধ্যে মিয়ানমার থেকেও অল্প পরিমাণ আমদানি করা হয়।

নতুন উচ্চতায় মূল্যস্ফীতি

এক কথায়, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে দামের একক। অর্থাৎ কোনো পণ্যের প্রকৃত যে দাম, তার চেয়ে বেশি দামে কেনার নামই মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতির এই সূচক উসকে যাওয়ায় বাড়ছে নাভিশ্বাস।

সরকারের মূল্যস্ফীতির হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি গবেষণা তথ্যের ফারাক অনেক। সরকারের দাবি, দেশে এখন মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ থেকে ৬ শতাংশ।

অন্যদিকে গবেষণা সংস্থা সানেম বলছে, এই হার এখন ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

সানেমের জরিপ বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শহরের মানুষ তাদের আয়ের ৬১ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্থ খাদ্যপণ্যে ব্যয় করে। আর গ্রামাঞ্চলে থাকা মানুষের মূল্যস্ফীতির হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।

শহরের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তারা খাদ্যপণ্য কিনতে ব্যয় করে আয়ের ৬০ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ। এ ছাড়া দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের আয়ের ৬১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্যপণ্য কিনতে।

রিকশা ও ভ্যানচালক শ্রেণির মানুষ খাদ্যপণ্য কিনতে ব্যয় করে আয়ের ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ, ছোট ব্যবসায়ীরা ৬১ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্থ খরচ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর