শহর থেকে গ্রাম। গাছে গাছে আমের মুকুল ছেয়ে গেছে সর্বত্র। সেই মুকুলের ম-ম গন্ধে মাতোয়ারা এখন রাজশাহীর প্রাণ, প্রকৃতি। মধুমাস আসতে আর কত দেরি, সেই হিসাবই করছেন এখন এই অঞ্চলের লোকজন।
রাজশাহী অঞ্চলে এর মধ্যেই প্রায় ৭০ শতাংশ মুকুল ফুটেছে। এবার এই অঞ্চলে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৪ টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন আমচাষিরাও। তাই মুকুল টিকিয়ে রাখার পরিচর্যায় তারা এখন ব্যস্ত।
ভরা বসন্তে গাছে গাছে মুকুল আসায় রাজশাহী অঞ্চলের অসংখ্য আমবাগান ও পথ-ঘাটের চিরচেনা রূপও যেন বদলে গেছে। নান্দনিক এই রূপের সুবাসই যেন ছড়াচ্ছে বাতাসে।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে ৪ জেলায় মূলত ব্যাপক ভিত্তিতে আমের চাষ হয়। এর মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় মোট ৮৪ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন, নওগাঁর ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন, নাটোরের ৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে ৮২ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, এবার জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। নতুন মুকুল আসার সময় এর মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু মুকুলে আমের গুটি আসার অপেক্ষা। কিছু কিছু মুকুলে গুটি চলেও এসেছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সব মুকুলেই গুটি ধরবে।
রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে জেলার বাঘা ও চারঘাট উপজেলায়। বাঘার আড়ানী থেকে পুঠিয়া উপজেলা সদর পর্যন্ত চলে যাওয়া রাস্তাটির দুই পাশে অসংখ্য আমবাগান। মুকুলে হলুদ হয়ে গেছে রাস্তাটির দুই পাশই।
চারঘাটের আমচাষি মোস্তাক আলী বলেন, ‘গত বছর গাছে মুকুল এলেও তা ধরে রাখতে পারিনি। তাই এবার আগে থেকে গাছে ভিটামিন, গাছের গোড়ায় সার, সেচ দিয়ে পরিচর্যা করছি। এতে মুকুলের গোড়া শক্ত হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার অনেক আম আসবে।’
আম ব্যবসায়ী ও চাষি মখলেসুর রহমান বলেন, ‘মুকুল যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য এন্টাকল, কনসিডর, বেসিসসহ নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।’
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘এবার গাছে যেভাবে মুকুল এসেছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।’
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম বলেন, ‘নতুন মুকুল আসার সময় ইতোমধ্যেই শেষ। এবার মুকুল এসেছে প্রায় ৭০ ভাগ গাছে। যে পরিমাণ মুকুল এসেছে, ভালো ফলন হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।’
মুকুল ঠিক রাখতে এখন একবার ওষুধ স্প্রে এবং গুটি আসার পর আরেকবার স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এই ফল গবেষক।