বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই বৃষ্টির চিকিৎসা শুরু ময়মনসিংহ মেডিক্যালে

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২২ ২০:৫৮

নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন বৃষ্টির বাবা-মাকে। দুর্গাপুর উপজেলার ইউএনও রাজীব উল আহসান বর্তমানে বৃষ্টির চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করছেন।

জন্মের এক বছর পর থেকে হাত-পা বেঁধে রাখা সাত বছরের শিশু জান্নাতুল বৃষ্টির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। তার চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছে একটি মেডিক্যাল বোর্ডও।

নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার ইউএনও রাজীব উল আহসান রোববার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনিই বৃষ্টির চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করছেন।

ইউএনও জানান, শনিবার বৃষ্টিকে তার বাবা-মাসহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট টিআই খান ওয়াসিমের সহযোগিতায় মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের ২৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় তাকে।

মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাউসার আহমেদের তত্ত্বাবধানে গঠিত একটি মেডিক্যাল বোর্ড বৃষ্টির চিকিৎসার সব বিষয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করছেন। বোর্ডের অপর সদস্যরা হচ্ছেন- ডা. প্রবাল অধিকারী ও ডা. সজিব। এ ছাড়া ইউএনওর প্রতিনিধি হিসেবে পারভেজ নামে এক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক বৃষ্টির বাবা-মাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. মুহাম্মদ কবির হাসান পারভেজ বলেন, ‘বৃষ্টি এক ধরনের মানসিক রোগী। জন্মগতভাবেই তার মানসিক সমস্যা রয়েছে। এ কারণে সে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ করে। আমরা তার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছি। আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে। দুয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতি বলা সম্ভব হবে।’

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে বৃষ্টি

ইউএনওর স্বেচ্ছাসেবী প্রতিনিধি পারভেজ বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন, চিকিৎসায় বৃষ্টির উন্নতি ঘটবে। হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করার যে উপসর্গ তার আছে, তা শিগগির কেটে যাবে। কিন্তু তার বিকাশসহ অন্য সমস্যাগুলোর জন্য আরও সময় লাগবে। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।’

বৃষ্টির চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়ায় তার মা আয়েশা খাতুন ও বাবা শাহজাহান মিয়া দুর্গাপুরের ইউএনও রাজীব উল আহসান এবং নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বলেছেন, ‘তাদের উদ্যোগের কারণেই মেয়েটার চিকিৎসা হচ্ছে। তারা দুজনই একটু পরপর চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।’

ইউএনও রাজীব উল আহসান বলেন, ‘ময়নসিংহ মেডিক্যালের চিকিৎসকরা বৃষ্টির চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার অস্বাভাবিক চঞ্চলতা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।’

ইউএনও জানান, বৃষ্টির চিকিৎসায় অনেকে সহযোগিতা করতে চাচ্ছেন। তাই এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে বৃষ্টির বাবা ও একজন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে একটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির হিসাব নম্বরটি সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে। এ ছাড়া বৃষ্টির চিকিৎসার শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: মুক্তি মিলবে কি শিশু বৃষ্টির?

নেত্রকোণার দুর্গাপুরের দশাল গ্রামের রাজমিস্ত্রি শাহজাহান মিয়া ও গৃহিণী আয়েশা খাতুনের মেয়ে জান্নাতুল বৃষ্টি। ২০১৪ সালের ৬ জুন একজন ধাত্রীর মাধ্যমে তার জন্ম হয়। ওই সময় তার নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করান স্বজনরা। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই দেখা দেয় তার অস্বাভাবিক আচরণ।

মুক্ত অবস্থায় নিজেই নিজের হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে বৃষ্টি। হাত-পায়ে কামড়াতে থাকে। রাতে না ঘুমিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। লোকজনকে মারতে আসে। জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।

এসব কারণে নিরুপায় হয়ে বৃষ্টিকে সব সময় ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন তার বাবা-মা। জন্মের এক বছর পর থেকে এভাবেই চলছে তার দুঃসহ জীবন।

বৃষ্টির বাবা-মা অতি দরিদ্র। তাই অর্থাভাবে মেয়ের সুচিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। বিষয়টি জানার পর ইউএনও রাজীব উল আহসান তার চিকিৎসার উদ্যোগ নেন।

নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন বৃষ্টির বাবা-মাকে। এ সময় তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির উন্নত চিকিৎসার সব ধরনের ব্যয় জেলা প্রশাসন থেকে বহন করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর