নোনা পানির সুন্দরবনে রাজত্ব করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাংলায় যাকে বলা হয় বাঘ। তবে বনে সহজে দেখা মেলে না প্রাণীটির। সম্প্রতি সুন্দরবনে বারবার সেই বাঘের দেখা মিলেছে।
সুন্দরবনের ছিটা কটকা খালে গত ১২ মার্চ একসঙ্গে চারটি বাঘের দেখা পেয়েছেন পর্যটকরা। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় একসঙ্গে তিনটি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজ’র ট্যুর গাইড শাহ ইলিয়াস বিন আজাদ (তাপস) বলেন, ‘আমরা ১২ মার্চ বিকেল ৫টার পরে ছিটা কটকা খালের অপর পাড়ে একটি বাঘ দেখতে পাই। আমরা লঞ্চ নিয়ে বাঘের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই, একটি দুইটি নয়, চারটি বাঘে একই স্থানে। তারা আকারেও প্রায় একই রকমের।’
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে একসঙ্গে একাধিক বাঘ দেখা গেলে সঙ্গে বাচ্চা থাকে। তবে আমরা যে চারটি বাঘ দেখেছি, সেখানে কোনো বাচ্চা ছিল না। সবগুলো বড় আকারের বাঘ। কিছুক্ষণ পরে তারা একে একে বনের ভেতরে চলে যায়। পরে আমরা ওই জায়গা থেকে চলে আসি।’
আমাদের টহল দল সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একসঙ্গে মা ও দুটি বাচ্চাসহ মোট ৩টি বাঘ দেখতে পায়। আমরা প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তাদের দেখেছিলাম। এ নিয়ে সুন্দরবনে আমি সরাসরি ৪ বার বাঘ দেখতে পেলাম। তাই নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি
ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজ’র সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ ‘এম ডি দ্যা ওয়েভ’ লঞ্চে ৬৮ জন পর্যটক নিয়ে তারা সুন্দরবনে যাত্রা করেন। ১২ মার্চ তারা বনের কচিখালিতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে বিকেল ৪ টার দিকে করমজলের দিকে রওনা করেন তারা। কিছুদূরে এগিয়ে ছিটা কটকা খালে বাঘের দেখা পান। ১৩ মার্চ দুপুরে তারা সুন্দরবন থেকে ফিরে এসেছেন।
এ লঞ্চে পযর্টক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সাবেক সভাপতি নিয়াজ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই সুন্দরবন ভ্রমণ করি। এবার প্রথম বাঘের দেখা পেলাম। এই অনুভূতি আসলে মুখে বলে বোঝাতে পারব না।
‘আমরা দেখলাম বাঘ চারটি নদীর চরে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে। আমরা লঞ্চ নিয়ে তাদের একেবারেই কাছে চলে গেলাম। প্রায় ৫০ গজ কাছ থেকে তাদের দেখা পেলাম। প্রচুর ছবি তুললাম। একটি বাঘ ছিল ঝোপের আড়ালে। বাকি তিনটি ছিল প্রকাশ্যে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পরিচিত অনেকই আছেন যারা ১০০ বারের বেশি সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। তবে কখনো বাঘের দেখা পাননি। বাঘ দেখা একটা বিরল ঘটনা।’
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কটকা এলাকায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিন বাঘের দেখা পেছেছিলেন বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যরা। এই টিমে ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের টহল দল সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একসঙ্গে মা ও দুটি বাচ্চাসহ মোট ৩টি বাঘ দেখতে পায়। আমরা প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তাদের দেখেছিলাম। এ নিয়ে সুন্দরবনে আমি সরাসরি ৪ বার বাঘ দেখতে পেলাম। তাই নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ ফেব্রুয়াতেও আমাদের কর্মকর্তারা বনে বাঘের দেখা পেয়েছিলেন। যা সুন্দরবনের বন কর্মীদের নিয়মিত টহল ও স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের নিরলস পরিশ্রমের ফল।’
তবে সুন্দরবনের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘ দেখাটা কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। যেহেতু সুন্দরবন বাঘের আবাসস্থল সেহেতু বাঘের দেখা যেতেই পারে।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি।