সবখানেই চলছে লালনের গানের মূর্ছনা। চলছে লালনের জাতপাতহীন, মানবতাবাদী, অহিংস দর্শনের প্রচার। সাধু-ফকিরদের সেবার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সবাই।
এ সব আয়োজন কুষ্টিয়ায় আখড়াবাড়িতে সাঁইজির ধামে। সেখানে মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে লালন স্মরনোৎসব। তিনদিন ধরে চলবে এ উৎসব। তাতে যোগ দিতেই আগেই জড়ো হয়েছেন লালনের ভক্ত-অনুসারীরা। আসছেন দর্শনার্থীরাও।
প্রায় দুইশ বছর আগে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই তার জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় সাধু-বাউলদের নিয়ে এই উৎসব করতেন। কুষ্টিয়ায় ছেউড়িয়ায় তার আখড়াবাড়ির রূপ বদলেছে, কিন্তু আজও বদলায়নি সে উৎসবের রেওয়াজ।
বছরে দুইবার এখানে বড় উৎসব বসে। একটি দোল পূর্ণিমার এ স্মরণোৎসব, আরেকটি উৎসব শুরু হয়েছে ফকির লালনের দেহত্যাগের পর। এবারের স্মরণোৎসব শুরুর আগেই চলে এসেছেন সাধু-ফকিররা। আসন গেড়ে বসেছেন। আখড়াবাড়ি ও এর বাইরে কালীগঙ্গা নদীপাড়ে লালন একাডেমির মাঠে।
উৎসবের মাধ্যমে লালনের মানবতাবাদী, অহিংস দর্শনের প্রচার বাড়লে দেশে দেশে সংঘাত কমে যাবে বলে মনে করছেন সাধু-বাউলরা।
ফকির আব্দুল করিম বলেন, ‘লালনের এই গান শুধুই গান নয়, এটি জ্ঞান বা বাণী। এগুলো মাণ্য করলেই শুদ্ধ মানুষ হওয়া যায়। হানাহানি বন্ধ হয়ে যায়।’
ফকিরানী হালিমা বলেন, ‘আগেভাগেই এসেছি সাঁইজির ডাকে। পাঁচ জনের সঙ্গে লালনের বাণী নিয়ে আলোচনা হবে, যা দেহের ভেতরে নেয়া যাবে। বাড়িতে বসে কী করব?’
গান-আলোচনা ছাড়াও এবারো সাধু-ফকিরদের রেওয়াজমতে অধিবাস, বাল্যসেবা ও পূর্ণসেবার আয়োজন থাকছে লালনের আখড়াবাড়িতে।
সাধু হতে গুরুর কাছে শিষ্যত্ব নেন নতুনরা। আখড়াবাড়ির মূল মাজারে যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন লালন সাঁই এবং তার সরাসরি শিষ্য। সেখানে বিশেষ ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন আগত ভক্ত অনুসারীরা। আর গুরু-শিষ্যের সাক্ষাতেও ভক্তি প্রদর্শন চলছে রেওয়াজমতে।
সাধু-ফকিরদের নিরাপত্তা ও নানান সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো দেখভাল করছে লালন একাডেমি। তাদের পক্ষ থেকে খাবারের আয়োজনও করা হবে।
একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম হক বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল এ উৎসব। এবার ১৫, ১৬ ও ১৭ মার্চ চলবে তিনদিনের স্মরণোৎসব। সরকারের অনুমতি পাওয়ায় সাধু-ফকিরদের মধ্যে চরম উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আমরাও সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। এই উৎসবের জন্য অনেক দেশ থেকে আসছেন লালন অনুসারী ও পর্যটকরা।’
তাদের নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক (এস আই) ফিরোজ মিয়া।
জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন দিনের স্মরণোৎসব উপলক্ষে দেশ বিদেশের যেসব অতিথি আসবেন তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আর লালন একাডেমির পক্ষ থেকে সাধু-ফকিরদের সেবা দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।’
পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ‘ইউনিফর্ম পুলিশ ছাড়াও ছেউড়িয়া এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে। ৮ ঘণ্টা করে একেকটি দল কাজ করছে। ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, লস্ট এন্ড ফাউন্ড কেন্দ্র ও স্পিডবোট টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নিরাপদে নির্মল আনন্দ নিতে পারবেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।’
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল লালন স্মরণোৎসব।