মাস দুয়েক পরই ঈদ। ঈদকে ঘিরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ব্যবসায়ীদের। রোজা যত ঘনিয়ে আসবে, পাইকারি দোকানে পণ্যের মূল্য ততই বাড়বে। তাই অনেকটা আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করতে হয় কাপড় ব্যবসায়ীদের।
এই ঈদকে ঘিরে কয়েক দফায় দোকানে পণ্য তুলেছেন চট্টগ্রামের জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী জুনায়েদ হোসেন। মার্কেটের পশ্চিম মাঠের দুই পাশে তিনটি দোকান তার। দুটিতে নারী ও শিশুদের জামা কাপড় ও একটিতে বিক্রি হয় চামড়াজাত পণ্য।
সবশেষ বুধবার ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার পণ্য দোকানে তুলেছেন তিনি।
শুক্রবার বন্ধ থাকে মার্কেট। তাই বৃহস্পতিবার রাতে দোকান বন্ধ করে সাতকানিয়ায় নিজ বাড়িতে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। শুক্রবার রাতে যখন ফিরছিলেন, তখন খবর পান মার্কেটে আগুন লেগেছে। আগুনে পুড়ছে তার দোকানও।
রাত পৌনে ১০টার দিকে যতক্ষণে মার্কেটে পৌঁছান, ততক্ষণে সব শেষ। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ‘সাতকানিয়া ফ্যাশন’ নামে কাপড়ের দোকান দুটি। এতে তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি টাকা।
শনিবার তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘যখন খবর পাই, তখন শহরের কাছাকাছি পটিয়ায় ছিলাম। দ্রুত মোটরসাইকেলে মার্কেটে এসে দেখি, কাপড়ের দোকান দুটি পুড়ে গেছে। একরাতেই সব শেষ হয়ে গেল।
‘প্রতি ঈদের আগের দিন বেচাবিক্রি শেষে পাওনাদারদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে সেমাই-চিনি নিয়ে বাড়িতে যাই। কিন্তু এবার কী হবে?’
এরই একটু পর বলেন, ‘চেষ্টা তো করছি। এই যে হাত কেটে গেছে কাচে। এখনো তো বেঁচে আছি, মরে যাইনি।’
জেলা প্রশাসনে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী জুনায়েদ বলেন, ‘আবেদন-টাবেদন করব না। ক্ষতিপূরণ দিলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকাই দিবে! বড়জোর ২৫ হাজার? এতে তো দোকান ওয়ারিংয়ের টাকাও হবে না।’
দোকানের সামনের বৈদ্যুতিক খুঁটির তারে স্পার্ক করত বলে দাবি তার।
বলেন, ‘এখানে মাঝে মাঝেই ছোট ছোট আগুন (স্পার্ক) লাগত। আমাদের কাছ থেকে ঠিক করার নামে ২০ টাকা, ৩০ টাকা করে দুই-তিন দিন পরপরই নিত। দুই মাস আগে ট্রান্সফরমার লাগিয়েছে, তখনও টাকা নিয়েছে।
‘শুক্রবার মার্কেট বন্ধ। গেটে ব্যারিকেড দেয়া থাকে, একটা কুকুরও মার্কেটে ঢুকতে পারে না। তাহলে বৈদ্যুতিক সমস্যা ছাড়া আর কীভাবে আগুন লাগতে পারে'?
জুনায়েদ হোসেনের এক দোকান পরই ‘আল্লাহর দান’ ও ‘মা-বাবার দোয়া’ নামের দুটি দোকান ছিল। এই দুই দোকানও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শুক্রবারের আগুনে। দোকান দুটির মালিক মো. নিজাম উদ্দিন।
পুড়ে যাওয়া দোকানের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসেছিলেন তিনি।
নিজাম বলেন, ‘সামনে রোজা, রোজার পর ঈদ। শবেবরাতের পরপরই পাইকারি দোকানে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই আগেভাগে জিনিস তুলেছিলাম কয়েক দফায়৷ আমার দুই দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার জিনিসপত্র ছিল। অধিকাংশই পুড়ে গেছে, কিছু মালামাল অক্ষত ছিল, কিন্তু সেসবও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আর বিক্রি করার মতো অবস্থায় নেই।’
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন বলেন, ‘আমাদের মার্কেটের মূল যে মিটারটা, মানে মাদার মিটার, সেটা মাস দুয়েক আগে চুরি হয়ে গেছে। এরপর নতুন মাদার মিটার বসানোর পর থেকে স্পার্কিং সমস্যাটা বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এটা কয়েকবার ঠিকও করেছেন। তারপরও এখান থেকেই আগুন ধরে গেল।’
এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জহুর হকার্স মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের দেড় ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনে অন্তত ৭০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে ১১টি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে এমন দাবি ফায়ার সার্ভিসের।