বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওষুধের দামে অরাজকতা

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২২ ০৮:৩৪

ওষুধের দোকানগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে করোনাকালে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বছরজুড়েই খুচরা পর্যায়ে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন।

মৌসুমি জ্বর-সর্দি-কাশি তো বটেই, এমনকি করোনায় আক্রান্ত হলেও ৯৮ শতাংশ রোগী অপ্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেবন করছেন ওষুধ। ফলে করোনা, সর্দি ও জ্বরের চিকিৎসায় সাধারণ ওষুধের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ওষুধের দোকানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে করোনাকালে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

শুধু করোনাকালেই ওষুধের বাজারের এমন পরিস্থিতি নয়, বছরজুড়েই খুচরা পর্যায়ে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। কোনো কারণ ছাড়া ওষুধের দাম বাড়ছে। যেন কেউ দেখার নেই।

দাম নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি তদারকি টিম রয়েছে, কিন্তু বাজারে সে টিমের তৎপরতা খুব একটা লক্ষ করা যায় না।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম। করোনা সংক্রমণের শুরুতে এটির চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ রোগীদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাকটেম্রা ইনজেকশন।

এই ইনজেকশন ২০০ ও ৪০০ মিলিগ্রামের শিশিতে পাওয়া যায়। পরিমাণের ভিত্তিতে ২১ থেকে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

অভিযোগ আছে, বিভিন্ন সিন্ডিকেট এটির দাম বাড়িয়ে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। কৃত্রিম সংকটও তৈরি করেছে দোকানগুলো। দরকারি এই ইনজেকশন সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে ফার্মেসিগুলো।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ফরাসি ওষুধ কোম্পানি রোস উৎপাদিত ওষুধটি ‘অ্যাকটেম্রা’ নামে বাজারজাত করা হয়। এটি পাশের একটি দেশ থেকে কালোবাজারের মাধ্যমে দেশে আসছে মিটফোর্ডের কিছু ব্যবসায়ীর কাছে। তারা ৪০০ এমএল ওষুধ বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায়।

দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের পর ঘরে ঘরে দেখা দেয় জ্বর -সর্দি। এ সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে প্যারাসিটামল। এই ওষুধের চাহিদা শুধু রাজধানীতে নয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও বেড়েছে।

ওষুধের দোকানের কর্মচারীরা বলছেন, করোনা আসার পর থেকেই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা বেশি। গত দুই সপ্তাহ ধরে এর চাহিদা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া শরীরে নানা ধরনের প্যারাসাইট প্রতিহত করার ওষুধ এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ প্রতিরোধ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিকেরও চাহিদা আছে। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধেরও চাহিদা অনেক। এগুলোর দাম বাড়তি।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, করোনা ও সাধারণ জ্বর প্রতিরোধে নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা সিরাপ, এইস, এইস প্লাস, এইস এক্স, ফাস্ট, ফাস্ট এক্স ট্যাবলেটের চাহিদা বেশি। এসব ওষুধের বাজারমূল্য প্রতি পাতা ১০ টাকা। অবশ্য কিছু কিছু ফার্মেসিতে ১৫ থেকে ১৭ টাকাও নিচ্ছে।

এ ছাড়া করোনা প্রতিরোধে ‘ফেবিপেরাভির’ নামের একটি ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এটি উৎপাদন করছে। ২০০ মিলিগ্রামের একটি ওষুধের দাম ২০০ টাকা হলেও বিভিন্ন ফার্মেসি এটি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছে।

কোভিড আক্রান্ত শ্বাসকষ্টের রোগীদের ‘মন্টিলুকাস ও ‘ডক্সিসাইক্লিন’ জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত মন্টিলুকাস ওষুধের দাম প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকা। এটি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়।

অন্যদিকে ডক্সিসাইক্লিন প্রতি পিসের দাম আড়াই থেকে ৪ টাকা। খুচরা দোকানিরা বিক্রি করে ৫ থেকে ১০ টাকায়।

এনেক্সপেরিন-সোডিয়াম ওষুধটি দেশীয় বেশ কিছু কোম্পানি উৎপাদন করে। এই ইনজেকশন রোগীদের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে কোভিড রোগীদের পেটে এটি দেয়া হয়। এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা হলেও এটি বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকায়।

করোনার চিকিৎসায় মলনুপিরাভির দেশীয় অনেক কোম্পানি উৎপাদন করছে।

করোনা প্রতিরোধে ৪০টি ক্যাপসুল খেতে হয়। ক্যাপসুলের বাজারমূল্য ১৬ হাজার টাকা হলেও ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও ওষুধ প্রস্তুতকারী কোনো কোম্পানি দাম বৃদ্ধি করেনি। অনেক সময়ে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে ফার্মেসিগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা সব দেশেই হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব ওষুধের সরবরাহ সংকট দেখা যায়, সেগুলোর দাম বাড়ে। এই সময়ে ফার্মেসি মালিকরা বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে ওষুধের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে কী না, আমার জানা নেই। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে সতর্ক থাকতে হবে।’

তার মতে, যখন ফার্মেসিগুলো দাম বেশি নেয়, তখন ক্যাশ মেমো নিয়ে মামলা করা যায়। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলা করা যায়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। ওষুধ প্রস্তুতকারী কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করেনি। ওষুধের বাজার তদারকি করার জন্য একটি টিমও থাকে, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

ওষুধ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওষুধের দাম আমরা ইচ্ছা করলেই বাড়াতে পারি না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন ছাড়া ওষুধের দাম বাড়ানো সম্ভবও নয়। আবেদন সাপেক্ষে অধিদপ্তর তা যাচাই-বাছাই করে। এ ক্ষেত্রে তারাও আইন-কানুন ও নীতিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত দেয়।’

ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের দাম নিয়ে অরাজকতা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো দেশে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করা ছাড়াও ওষুধগুলোর দাম নির্ধারণ করে সরকার। এটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম। আমাদের দেশের ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতেও তা ছিল।

‘কিন্তু ১৯৯৪ সালে ওষুধ কোম্পানির দাবির মুখে বলা হলো, ১৭ শতাংশ ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে, বাকিটা করবে কোম্পানি। এটাকে বলা হলো ইন্ডিকেটিভ প্রাইস। এ রকম আজগুবি নিয়ম দুনিয়ার কোথাও নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর