গাজীপুরের টঙ্গীতে পুলিশের অভিযানে জব্দ ফেনসিডিলের তথ্য রেকর্ড না করার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
শনিবার গঠিত এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সিটিএসবি) হুমায়ুন কবিরকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) হাসিবুল আলম ও সহকারী কমিশনার (ডিবি) আবু সায়েম নয়ন।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপকমিশনার (সিটিএসবি) হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শনিবার আমরা রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্তে অভিযুক্ত ওই তিন এসআইয়ের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত ভুল কিংবা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।’
অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রেখেই তদন্ত কার্যক্রম চলবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশের দাবি অনুযায়ী উদ্ধার ১১ বোতল ফেনসিডিলের জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাসুদ বলেন, ‘জব্দ তালিকা আগেই প্রস্তুত করা ছিল। সেটা জিডিতে যুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
শনিবার নিউজবাংলায়- জব্দ ফেনসিডিলের তালিকা নেই, ওসি বললেন ‘ছোট ভুল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরইমধ্যে বিষয়টি মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
গাজীপুরের টঙ্গীর একটি বাড়িতে মাদক উদ্ধারের অভিযানে যান টঙ্গী পূর্ব থানার তিন এসআই। আতাউর রহমান মৃধা নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে তারা কয়েক বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেন। তবে আটক করা যায়নি কাউকে।
এ ঘটনা গত ২৭ ফেব্রুয়ারির। অথচ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থানায় ওই অভিযানের তথ্য রেকর্ড করা হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযানে আসামি গ্রেপ্তার না হলেও থানায় সাধারণ ডায়েরি করে জব্দ করা মালামালের তালিকাসহ তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠাতে হয়। এ অভিযানের ক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি। অবশ্য একে স্রেফ ‘ছোট ঘটনা’ হিসেবে দাবি করছেন থানার ওসি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, আতাউরের সঙ্গে ঘটনাস্থলেই আর্থিক লেনদেন হয় ওই তিন এসআইয়ের। এ কারণে থানায় রেকর্ডভুক্ত করা হয়নি অভিযানের তথ্য।
অভিযানে যাওয়ার ও ফেনসিডিল জব্দের বিষয়টি স্বীকার করেছেন থানার এসআই আশিকুল হক রোনাল্ড, এসআই লিটন শরিফ ও এসআই মো. রাজিব। তবে থানায় সেটি রেকর্ড না করার কারণ জানতে চাইলে তারা সুস্পষ্ট কোনো জবাব দেননি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (টঙ্গী জোন) পিযুষ কুমার দে জানান, এ ধরনের কোনো অভিযান হয়েছে বলে কোনো তথ্য তার কাছেও নেই।
অভিযানের পর ওই ৩ এসআইয়ের জিডি না করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওসি জাবেদ মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘তাদের (ওই তিন এসআইয়ের) পদ্ধতিগত ভুল হয়েছে, তবে অনৈতিক কোনো কিছুর প্রমাণ আমি কিন্তু পাইনি... খবর আসছে একটা চালান আসছে, বাট কিছু ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেছে আগেই, এ জন্য কিছু ইনফরমেশন গ্যাপ হয়ে গেছে... এরা বিষয়টা হালকাভাবে নিছে... কখন ছোট ঘটনা বড় হয়ে যায়...।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিকে ধরতে অভিযান চলছে, অনৈতিক কিছু হয়ে থাকলে আমি ব্যবস্থা নেব, তবে এমন কিছু হয় নাই।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (টঙ্গী জোন) পিযুষ কুমার দে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি বা জিডি না করে থানার ডিউটি অফিসার অভিযান করতে পারেন না। অভিযানে যাওয়া এবং ফিরে আসার বিষয়েও একই নিয়ম। তবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারির ওই অভিযান সম্পর্কে আমি অবগত নই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারও বাসায় মাদক পাওয়া গেলে কাউকে আটক করা না গেলেও বাড়ির লোকের নামে মামলা হবে। কোনো কিছু জব্দ হলে থানায় জিডিও হবে। এটাই নিয়ম।'