করোনা মহামারির পরীক্ষায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) উত্তীর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।
তিনি বলেছেন, ২০২০ ও ২০২১-এই দুই বছরে নতুন করে তিন কোটি গ্রাহক এই সেবায় যুক্ত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান বলে দেয় যে, এমএফএস এই কঠিন সময়ে মানুষের কতটা কাজে এসেছে। মহামারির মধ্যে এমএফএসের গুরুত্ব মানুষ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। সাধারণ ছুটির সময় সার্বিকভাবে লেনদেন কমে গেলেও এমএফএসের কল্যাণে সমাজে অর্থের প্রবাহ সচল ছিল। এমনকি এই সময় গ্রাম থেকে শহরেও টাকা পাঠানো হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয়ের কার্যালয়ে ‘এমএফএসের এক দশক: করোনা-পরবর্তী মাঠবাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনায় আতিউর রহমান এ সব কথা বলেন।
শনিবার উন্নয়ন সমন্বয়ের কার্যালয়ে ‘এমএফএসের এক দশক: করোনা-পরবর্তী মাঠবাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনায় আতিউর রহমান এ কথা বলেন। ছবি: নিউজবাংলা
উন্নয়ন সমন্বয় ও নলেজ অ্যালায়েন্স এ আলোচনার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে এক দশক আগে যখন আমরা বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবা তথা এমএফএস-এর যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন প্রান্তে বসবাসকারি নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সুলভে সহজ ডিজিটাল আর্থিক সেবা পৌঁছানোই প্রধানতম লক্ষ্য ছিল। এই করোনাকালে আমরা দেখেছি যে, শহর থেকে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সর্বত্রই নিম্ন আয়ের মানুষ এমএফএস-এর সুবিধা ভোগ করেছেন। সে বিবেচনায় বলা যায় যে, এমএফএস করোনার পরীক্ষায় পাশ করেছে।’
‘এমএফএসের মাধ্যমে এখন সহজেই শহর থেকে গ্রামে টাকা যাচ্ছে, এতে সমাজে ভোগবৈষম্য কমেছে। প্রান্তজনের বড় সহায় হয়ে উঠেছে এমএফএস। অন্য কথায়, এই ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে।’
দেশে এমএফএস সেবার ১০ বছর পূর্তি এবং করোনা মহামারির মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে সম্প্রতি এক জরিপ পরিচালনা করেছে উন্নয়ন সমন্বয় ও নলেজ অ্যালায়েন্স। জামালপুর জেলার প্রত্যন্ত ইসলামপুর উপজেলার মন্নিয়ার চর এলাকায় এই জরিপ করা হয়। জরিপ পরিচালনা করেন নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার সাখাওয়াত আলী।
অনুষ্ঠানে খন্দকার সাখাওয়াত আলী জরিপের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘করোনাকালে চরাঞ্চলে এমএফএস হিসাব খোলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকারি সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা এমএফএস হিসেবে দেওয়ার কারণে এটা ঘটছে। যেসব চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ–সংযোগ পৌঁছেছে, সেখানে অনেক মানুষ এসএমএসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন।’
‘প্রান্তিক অঞ্চলে এমএফএস সেবায় মূল ভূমিকা পালন করেন এজেন্টরা। মানুষ এই সেবার খুঁটিনাটি বোঝার জন্য পুরোপুরি এজেন্টদের ওপর নির্ভর করেন। করোনাকালে এই এজেন্টরা দোকান বন্ধ থাকার সময়ও অনেক সময় সেবা দিয়েছেন। তবে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলো চর থেকে দূরে হওয়ায় তাদের অসুবিধায় পড়তে হয়।’
অনুষ্ঠানে এমএফএস খাতের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণঅ সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘দেশের এমএফএস খাত নগদবিহীন লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন সব আর্থিক সেবার মধ্যে সমন্বয় আনা দরকার, যাতে মানুষ মুঠোফোনের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যে কাজ করছে। এটা হলে নগদবিহীন সমাজের পথে অনেকটাই অগ্রগতি হবে।’
এমএফএস সেবার মাশুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাশুল কমানো উচিত, তবে আমি জনতুষ্টিবাদী নই, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা কমাতে হবে। এখন যে মাশুল আছে, তার কাঠামো দেখলে সবাই একমত হবেন, এটা খুব বেশি নয়। আর অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন বাড়লে এমনিতেই মানুষের ক্যাশআউট করার প্রয়োজন হবে না, সে জন্য দরকার সমন্বয়।’
‘তবে দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার কম, ব্যবহার বাড়াতে এসব উপকরণ সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আনতে হবে,’ বলেন আহসান মনসুর।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিকাশের সাবেক কর্মকর্তা দাশগুপ্ত অসীম কুমার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান, এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের পরিচালক জামালউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।