বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবির শতবর্ষের মিলনমেলায় বাসি নাশতা দেয়ার অভিযোগ

  •    
  • ১২ মার্চ, ২০২২ ২২:৪১

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সকালের নাশতা হিসেবে সবাইকে পরোটা আর ভাজি দেয়া হয়েছে। ভাজি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমিসহ অনেকেই এই নাশতা খেতে পারিনি। আমি ২৫ বছর বিভিন্ন প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জের দায়িত্বে ছিলাম। এ রকম বাজে ব্যবস্থাপনা কখনও দেখিনি।’

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের মিলনমেলায় বাসি নাশতা দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মিলনমেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও হতাশা জানিয়েছেন তারা।

শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মিলনমেলার আয়োজন শুরু হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অনুষ্ঠানে আগত সাবেকদের নাশতা দেয়া হয়।

সাবেক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব নাশতা ছিল দুর্গন্ধযুক্ত এবং বাসি।

মার্কেটিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সকালের নাশতা হিসেবে সবাইকে পরোটা আর ভাজি দেয়া হয়েছে। ভাজি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমিসহ অনেকেই এই নাশতা খেতে পারিনি। আমি ২৫ বছর বিভিন্ন প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জের দায়িত্বে ছিলাম। এ রকম বাজে ব্যবস্থাপনা কখনও দেখিনি।’

তিনি বলেন, ‘গিফট হিসেবে যে ব্যাগ দেয়া হয়েছে সেই ব্যাগের মধ্যে কারও নিমন্ত্রণপত্র নেই তো কারও মাস্ক নেই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। আর ব্যাগ যেটা দেয়া হয়েছে, সেটা দুই দিন ব্যবহারের পর আর ব্যবহার করা যাবে না।’

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেখানে বসার ব্যবস্থা, সেখানে মাঝখানে কোনো ফ্যান নেই। অনেকের গাড়ি আছে। তবে গাড়ির ড্রাইভারও তো মানুষ। তাদের জন্য কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।’

দুপুরের খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন এই সাবেক শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘লাঞ্চটা উন্নত মানের হয়নি। এটির যে স্বাদ সেটি খুবই বাজে। বছরে কয়েকবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। আমরা চাই উন্নত মানের কিছু হোক। মানুষ সুখস্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরুক।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিলনমেলায় আসা আরেক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করব? বিশ্ববিদ্যালয়টা তো আমাদেরই। তবে ব্যবস্থাপনা নিয়ে বলতে গেলে খুবই বাজে হয়েছে। সকালের নাশতাটা দুর্গন্ধযুক্ত ছিল। প্যাকেট খুলতেই দেখি গন্ধ বেরোচ্ছে। ভাবছি কোত্থেকে গন্ধটা আসছে? পরে দেখি নাশতার প্যাকেট থেকে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু সকালের নাশতা না, দুপুরের খাবারের টেবিলেও কোনো ওয়েটার ছিল না। নিজ থেকেই খুঁজে খুঁজে খাবার আনতে হয়েছে। আর গিফটা যেটা দেয়া হয়েছে সেখানে লেখা, মাদককে না বলুন। অর্থাৎ শতবর্ষের প্রোগ্রামে স্পন্সরের দেয়া লেখাসংবলিত ব্যাগ দিয়েছে।’

খাবারের মান দেখে ক্ষুব্ধ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৯৯৪-৯৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী সিনথি আক্তার।

তিনি বলেন, ‘১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নাশতাটাও খেতে পারলাম না। এ রকম জানলে আমি রেজিস্ট্রেশনও করতাম না। ব্যবস্থাপনা পুরো থার্ড ক্লাস। মাত্রই আমার এক সিনিয়র ভাই বলে গেলেন সকালের নাশতাটা খেলে পেটে অসুখ হবে। ভাজিটা নাকি গতকাল করেছে। অনেকে খায়নি।’

সিনথি আক্তার বলেন, ‘সকাল ১০টা না বাজতেই নাশতা শেষ হয়ে গেল। এসে কোনো নাশতা পেলাম না। যদি এক লাখ মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে থাকে তাহলে এক লাখ খাবার হওয়া উচিত।’

গিফট হিসেবে দেয়া ব্যাগ নিয়ে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘থার্ড ক্লাস ছোট বাচ্চাদের ব্যাগ দিয়েছে। ওই ব্যাগের ভেতর দুইটা বই আর একটা মাস্ক দিছে। একটা মাস্ক আর একটা ক্রেস্ট। এটা একটা উপহার হলো?’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ১৯৮৮-৮৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিদ্যুৎ কুমার ঘোষ বলেন, ‘খাবারের আইটেমে আরও পরিবর্তন আনা যেত। তবে এত বড় একটা আয়োজন হিসেবে গিফট মোটেও ভালো হয়নি। যে ব্যাগটা দিয়েছে এটা রং করা ব্যাগ। সাদা কাপড় নিয়ে কেউ বসে তাহলে রং উঠে যাবে। আর গিফটে একটা মগ বা প্লেট দিতে পারত, যেটা মানুষ সাজিয়ে রাখতে পারত।’

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যে ফেসবুক পেজ সেখানেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন অনেকেই।

মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া নামে একজন লিখেছেন, ‘আমার মাস্ক, খাবার, মাদকের সুভেনির আয়োজক কমিটির জন্য উপহার হিসেবে ফেরত দিলাম।’

নুর মোহাম্মদ আজমী নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘অসংখ্য সতীর্থ সকালের নাশতা পায়নি, আমিও না। দুপুরে বাসায় গিয়েই খাব ইনশাআল্লাহ।’

আরিফ মাইন উদ্দীন নামে একজন লিখেছেন, ‘একটা কোটপিন ছাড়া অন্য গিফটগুলো ছিল বাজে, মানে খুবই বাজে। এত বাজে জিনিস তো এই পর্যন্ত কোনো প্রোগ্রামে দিতে দেখি নাই।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছে তারা কারা? আমার এখানে কোনো অভিযোগ নেই। আমরা সবকিছু ভালোভাবে করার চেষ্টা করেছি। এখানে তো ১২ হাজার মানুষের জমায়েত। কোনো একটা জায়গায় একটু বিচ্যুতি হতেই পারে। সেটা বলতে পারি না।’

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নামে যে ফেসবুক গ্রুপে মিলনমেলা নিয়ে গ্রুপের সদস্যরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের অ্যালামনাই না। এটা ফলস। অ্যালামনাইয়ের নামে এটা একটা বাজে জিনিস চলছে। গ্রুপটা আমরা এখন অফিশিয়ালি বন্ধ করব। আমরা অলরেডি চিঠি দিয়ে দিয়েছি।’

দুই দিনের প্রোগ্রামের জন্য ফি নিয়েও এক দিনের প্রোগ্রাম করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পার পারসন আমরা ১ হাজার ৫০০ টাকা নিলেও আজকে পার পারসন আমাদের কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নিজেদের টাকাতেই আমরা প্রোগ্রাম করছি। কোনো স্পন্সরের টাকা আমরা এখানে খরচ করিনি। এটা আমরা জমা করে রেখেছি যেন শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই মিলনমেলার আয়োজন করেছিল। এতে ৯ হাজার ৩৩৭ জন সাবেক শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর