মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও দুর্নীতি-অপশাসনের তথ্য আড়াল করতেই সরকার নতুন দুটি ‘নিবর্তনমূলক’ নীতিমালা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই নীতিমালাগুলোকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দাবি করে বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নীতিমালা দুটি হচ্ছে দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস-২০২১ এবং ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘এই নিবর্তনমূলক নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, তাদের ভোট ডাকাতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলোর প্রচার ঠেকাতে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিমাণ ইতিহাস বিকৃতি করেছে সেই বিষয়ে কথা না বলার জন্যও তারা এই নীতিমালা ব্যবহার করবে।’
শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পোক্ত করতেই এই দুই নীতিমালা করা হয়েছে, যাতে আরও শক্ত করে ধরা যায়। দেশের জনগণের বাক-স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে, সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে বিটিআরসি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এই দুই নীতিমামলাসহ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
এই নীতিমালাগুলো বাতিলের দাবিতে প্রয়োজনে কর্মসূচি দেয়ারও কথা জানিয়েছেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এখন তো খসড়া করেছে। এটা যদি দেখি যে, সরকার এই নীতিমালাকে গ্রহণ করে ব্যবস্থা নিচ্ছে তখন তো আমরা অবশ্যই কর্মসূচি দেব।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই দুটি নীতিমালা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, বরং জাতিসংঘ ঘোষিত ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস (ইউডিএইচআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসেরও (আইসিসিপিআর) পরিপন্থি।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে জাতিসংঘের অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ম্যানিলা প্রিন্সিপাল এবং সান্তা ক্লারা প্রিন্সিপালের সিদ্ধান্তের দৃষ্টিতে দেখলে এই দুটি নীতিমালা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ফখরুল বলেন, ‘এই নীতিমালা প্রণয়নের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে জনগণের কন্ঠরুদ্ধ করে একদলীয় বাকশালী কায়দায় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বতনমূলক নীতিমালা কার্যকর হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনলাইনভিত্তিক মিডিয়াগুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকার বাধাগ্রস্থ হবে। পাশাপাশি অনলাইন এনক্রিপশন অকার্যকর করে নিরাপত্তাকে দুর্বল করে ফেলবে। এর ফলে মানবাধিকারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।’
ফখরুল বলেন, ‘সাংবাদিক, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠি আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’
দেশে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়ার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে অনলাইনভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে।
এখানে যেমন অনেক কনটেন্ট খুব প্রশংসা পাচ্ছে, তেমনি কিছু কনটেন্ট নিয়ে হয়েছে সমালোচনা। ঘটেছে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও।দেশের ওটিটি ছাড়াও বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে এদেশে। তৈরি হচ্ছে ব্যবসার সুযোগ। ওটিটির কার্যক্রম তদারকির জন্য নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া তৈরিতে কাজ করছে ১৪ সদস্যের কমিটি।গত ডিসেম্বরে গঠন করা হয়েছে কমিটি। তারা এরই মধ্যে তিনটি সভায় অংশ নিয়েছে। সবার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। কমিটির অনেকেই তাদের লিখিত পরামর্শ জমা দিয়েছেন।