দেশের বর্তমান পরিস্থিতি একাত্তরের চেয়ে খারাপ বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘সে সময় পাকিস্তানিরা ঘোষণা দিয়ে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করত। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ঘোষণা ছাড়াই জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা মানুষকে নিপীড়ন করছে।’
সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সকালে ভার্চুয়াল স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
'কোভিড-পরবর্তী নতুন বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতির নিরিখে নির্বাচনী গ্রহণযোগ্যতা কর্তৃত্ববাদী সরকারি অবস্থান’ শীর্ষক এ স্মারক আলোচনা সভার আয়োজন করে মশিউর রহমান যাদু মিয়া মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে সরাতে না পারলে দেশ আরও সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান টার্গেট হলো এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরানো। এরপর একটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তা না হলে ক্ষমতাসীনদের দুর্বৃত্তায়ন থামবে না। সেই লক্ষ্যে আমরা বিভেদ ভুলে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে আসা তথা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কথা বলছি।’
ফখরুল বলেন, ‘গত ১৪-১৫ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। সেটা হলো যারা এই দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন তারা দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। তারা ভিন্নমতের মানুষদের দমন করছে। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। তার কারণ হলো জনগণের কাছে এই সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই।
‘আজকে প্রতিনিয়ত মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই, বরং তারা মিথ্যা তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা নেই। নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। প্রবাসে যারা রয়েছেন, তাদেরও সোচ্চার হয়ে কথা বলতে হবে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার আগে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এখন তারা ফের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা আরও ভয়াবহ ও মারাত্মক। এই নীতিমালার ফলে তারা আমাদের কথা বলা বন্ধ করতে চায়। সুতরাং ভার্চুয়াল সভা বা কথা বলাও তারা বন্ধ করতে চাইছে।’
যাদু মিয়ার স্মৃতিচারণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মশিউর রহমান যাদু মিয়া তার দল ন্যাপ-ভাসানী বিলুপ্ত করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে দেশের আর্থসামাজিক, ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সেই থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্ত ভিত রচিত হয়।
‘আজ যার সুফল ভোগ করছেন দেশের কোটি কোটি মানুষ। আজকের এই মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে মরহুম যাদু মিয়ার স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘মানবসমাজ চিরকাল এক রকম থাকে না। সেটা পরিবর্তনশীল। তেমনই আজকে মহামারি করোনা-পরবর্তী বিশ্বে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটছে। দেশের পরিবর্তনে মরহুম মশিউর রহমান যাদু মিয়ার অবদান অনস্বীকার্য।
‘আজকে আমাদের কথা বলতে হয় মেপে মেপে। কথা বলতে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। সুতরাং দেশের চলমান সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে এবং কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে আবারও সব রাজনৈতিক দল ও মতের ঐক্য দরকার।’
আমেরিকার স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের শিক্ষক মোহাম্মদ ইমরান আনসারীর পরিচালনায় সভায় ভার্চুয়ালি আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কানাডার ডউসন কলেজের শিক্ষক ড. আবিদ বাহার, শিক্ষাবিদ ড. তাজ হাসমী, মরহুম যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানসহ অনেকে।
এ ছাড়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকসহ অনেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।