ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের গেস্টরুমে মুখে ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেট খেতে বাধ্য হওয়া এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী আবু তালিব হল প্রসাশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আবু তালিব শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় তিনি বৃহস্পতিবার রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০১(ক) নম্বর কক্ষে তার সঙ্গে ঘটা সব ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনেন।
আবু তালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন। তারা সবাই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
হলের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।
হলের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দেন আবু তালিব। বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আমাকে মিনি গেস্টরুম ডাকা হয়। একপর্যায়ে সামান্য একটা ভুলের কারণে আমাকে হাতে না ধরে মুখে সিগারেট খাইতে বাধ্য করে। আমি খেতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। যদি সিগারেট না খাই তাহলে রুমের ভেতর বসিয়ে রেখে সিগারেট খাওয়ানোর থ্রেট দেয়।
‘বাধ্য হয়ে সিগারেট খেতে গিয়ে হাতে ধরতে চাইলে স্টাম্প দিয়ে হাতে আঘাত করে। জোর করে সিগারেট খাওয়ানোর পাশাপাশি আমার শারীরিক গঠন ও হাঁটাচলা নিয়ে মাদকাসক্ত হিসেবে ব্লেম করে এবং বকাবকি করে। অভিযুক্ত (শান্ত) মুখে সিগারেট দিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে টানতে বলে। একপর্যায়ে সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে আমি নিঃশ্বাস নিতেও পারিনি।’
আবু তালিব জানান, তাকে এ সময় অন্যরাও গালাগালি করেন। রাত ১টায় গেস্টরুম থেকে বের হয়ে তিনি হল ছাড়েন। অবশ্য রাত ৩টার দিকে তাকে তার বন্ধুরা হলে ফেরত নিয়ে যান। সকালে হলের সিনিয়ররা তাকে এবং অভিযুক্ত শান্ত ও বাঁধনকে নিয়ে বাইরে যান। সে সময় আবু তালিব যেন ঘটনা কাউকে না জানান সে ব্যাপারে সতর্ক করেন।
হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটি এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। হলে আমাদের নিয়মিত নির্যাতন করা হয়, কিন্তু হল প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। প্রাধ্যক্ষ, হাউস টিউটর উনারা নামেমাত্র প্রশাসন। বাস্তবে তারা পুতুল, ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। তাদের রেখে সরকারের টাকার অপচয় ছাড়া কিছু নয়।’
তার পক্ষে হলে না থেকে পড়াশোনা করাও সম্ভব নয় জানিয়ে বলেন, ‘পারিবারিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হলের বাইরে থেকে পড়াশোনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই গেস্টরুমের নির্যাতন সহ্য করেও হলে থাকতে হয়।’
ছাত্রলীগকর্মীদের নির্যাতনে এখন পর্যন্ত ২৫ জন শিক্ষার্থী হল ছেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন আবু তালিব।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত ভাইয়ের গ্রুপ সপ্তাহে তিন দিন সাধারণ গেস্টরুম এবং চার-পাঁচবার করে মিনি গেস্টরুমে নেয়া হয়। প্রতিদিন কেউ না কেউ নির্যাতনের শিকার হয়, কেউ ভয়ে মুখ খুলে না। আমাদের বর্ষের আমরা শুরুতে ৭৫ জন ছিলাম, এখন ৪৫ জন আছি। ২৫ জন নির্যাতনের কারণে হল ছেড়ে দিয়েছে। আরও অনেকে হল ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে।’
তালিব জানান, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষকে তার অভিযোগগুলো ই-মেইল করেছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন হল প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না দেখার।
লিখিত অভিযোগ না দিয়ে ই-মেইল করেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন করার পর আমার ওপর ফের নির্যাতন হওয়ার শঙ্কায় আমি হলে যেতে ভয় পাচ্ছি। তাই সশরীরে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার সাহস করিনি। স্যারকে আমি প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে, পরে ই-মেইল করেছি। স্যার বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’
ই-মেইল পেয়েছে কি না জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেনকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় হল প্রশাসনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।