২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এখন মর্যাদার চোখে দেখা হয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, দেশ তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে।
যতক্ষণ বেঁচে আছেন দেশ ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে যেন চলতে না হয়।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আবুধাবি সফররত সরকারপ্রধান তার আবাসস্থল থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভোট এবং সহযোগিতায় রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি। আমার দৃষ্টিতে, এটা হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। ক্ষমতাটা আমার কাছে ভোগের বস্তু নয়। ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ এবং যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেটা পূর্ণ করা।’
টানা তিনবার নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে সরকার গঠনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস আপনারা যদি একটু দেখেন, লক্ষ করবেন পচাত্তরের পর এ দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। একেকটি ক্যু হয়েছে, সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, বিমানবাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে এবং অস্থিরতা ছিল। বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।’
ওই সময় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে এই ১৩ বছর আমরা পূর্ণ করেছি। একটানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি, কৃতজ্ঞতা জানাই আপনারা যারা প্রবাসী, আপনাদের প্রতিও। কারণ আপনাদের কাছ থেকেও ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি, সহযোগিতা পেয়েছি। আর সে কারণেই আজকে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ শুনলে সবাই একটা মর্যাদার চোখে দেখে। সবাই সমীহ করে। বাংলাদেশ আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে। এটা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ আছি দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।’
আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান, ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ব্যাবসায়িক প্রতিনিধিরা
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের যারা অনিয়মিত হয়ে গেছেন, তাদের নিয়মিতকরণে সরকার তার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলেও প্রবাসীদের অবহিত করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যেসব দেশে আমাদের অনিয়মিত শ্রমিক আছেন, তারা যেন নিয়মিত হন তার জন্য আমরা কূটনৈতিকভাবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি। করোনার সময় যারা আটকা পড়েছিলেন, আপনারা জানেন যে তাদের স্পেশাল প্লেন পাঠিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছি। যাতে তারা কষ্ট না পায়, সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই সবদিক থেকে যতটা প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের যারা যে দেশে আছেন সে দেশটির আইন-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘যখন যে দেশে থাকবেন, সে দেশের আইন মেনে চলবেন। সে দেশের নিয়ম মেনে চলবেন। যাতে করে সে দেশের কাছে যেন আমাদের দেশের মুখটা বড় থাকে, আমাদের দেশের সম্মান যাতে কখনও নষ্ট না হয়।
‘তাই আপনারা যে যে দেশে বসবাস করবেন, যে দেশে কাজ করবেন, সে দেশের আইন, সে দেশের নিয়ম, সে দেশের সবকিছু আপনাকে মেনে চলতে হবে। এতে যেমন নিজের সম্মান, নিজের নিরাপত্তা, নিজের দেশের সম্মান, আবার আপনি যে দেশে কাজ করছেন, সে দেশের সম্মানটাও আপনাদের রক্ষা করে চলতে হবে। আপনারা সেভাবেই চলবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি আমাদের মেধা, আমাদের মনন, আমাদের শক্তি দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব এবং বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমাদের একটা আন্তরিকতা এবং দায়বদ্ধতা আছে বলে আমি মনে করি। এই দেশটাকে আমার উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশের মানুষ মর্যাদার সঙ্গে বাঁচবে। এ দেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। তাদের উন্নয়নে আপনি সহযোগী, যারা প্রবাসে কাজ করেন। আপনাদের ভালো-মন্দ দেখার বিষয়টি সব সময় আমাদের মাথায় আছে।’
আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল, আবুধাবি থিয়েটার, বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই, প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমাহের বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে যুক্ত ছিলেন প্রবাসীরা।
প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রান্তে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, কনস্যুলেট জেনারেল বিএম জামাল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী স্ট্র্যাটেজিক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ অন্যান্য ব্যাবসায়িক প্রতিনিধিরা। আবুধাবি প্রান্তে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
এর আগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমাহ বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাস আল খাইমাহ বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এ সময় তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন আমি আরব আমিরাতে এসেছিলাম তখনও এখানে বাংলাদেশি স্কুল চালুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন স্কুলটির কিছু উন্নয়ন দরকার। স্কুলটা যেন বন্ধ না হয় তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
‘তার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আজ আরব আমিরাতে উপস্থিত থেকে এ রকম একটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
এ সময় রাস আল খাইমাহ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি তাজ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান।