সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরোটা ভাজায় স্যালাইন পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ। এই পদ্ধতি ব্যবহারে একদিকে যেমন তার তেলের সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছে তার হোটেলটি। দূর-দূরান্ত থেকে এই হোটেলে পরোটা খেতে আসছেন অসংখ্য মানুষ।
আব্দুল হামিদ মনে করেন, সাংবাদিকদের কল্যাণেই আজ তার ভাগ্য বদলে গেছে। সম্প্রতি তার স্যালাইন পদ্ধতিতে পরোটা ভাজা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হলে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। এর আগে বেশ কিছুদিন ব্যবসায় টানা লোকসান গুনেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিউজবাংলাকে আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আগে মেজাজটা খিটখিটে থাকত৷ সাংবাদিক আসায় সেদিন বিরক্তও হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভালো লাগছে। ব্যবসায় লাভবান হচ্ছি।’
সাংবাদিক দেখলে এখন আর বিরক্ত হন না হামিদ। তিনি জানান, অন্যান্য হোটেলে পরোটা বেশি দামে বেচলেও তিনি আগের দামেই বিক্রি করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, হামিদের হোটেলে এখন অসংখ্য মানুষের ভিড়। এসব মানুষের কেউ কেউ ২৫ কিলোমিটার দূর থেকেও এসেছেন। সানন্দে পরোটা খাচ্ছেন তারা। কেউ এসেছেন স্যালাইন পদ্ধতিতে পরোটা ভাজা শিখতে।
২৫ কিলোমিটার দূর থেকে হামিদের হোটেলে আসা রাহিমুল-লিজা জানান, পত্রিকায় এই হোটেলে পরোটা ভাজার খবর পড়ে তারা দেখতে এসেছেন। নিজেদের বাসায় তারা এভাবে পরোটা ভাজার চেষ্টা করবেন বলেও জানান।
হাকিম উল কবির নামে আরেকজন বলেন, ‘তেলের দামে নাজেহাল আমরা। এমন উদ্যোগ সত্যিই কৌশলী৷ বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অংশ।’
শুক্রবার ছুটির দিনটিতে বিকেলের নাশতা করতে এসে যুবক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মোহম্মদপুর ইউনিয়ন থেকে রহিমানপুরের মথুরাপুরে পরোটা খেতে এসেছি। এটি এখন বিনোদন কেন্দ্র হয়ে গেছে। পরোটা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানি৷ তবুও উপভোগ করছি।’
হোটেলের মালিক আব্দুল হামিদ জানান, স্থানীয় রুহুল পণ্ডিতের স্যালাইন পদ্ধতিতে পরোটা ভাজার বুদ্ধিতে তিনি প্রথমে বিব্রত হয়েছিলেন। শুরুতে অনেকে এটি নিয়ে হাসাহাসিও করেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন বুঝতে পারছি আগে আমার কত তেল অপচয় হতো!’
হামিদের স্ত্রী বলেন, ‘আগে সকালে ৩০০ পরোটা বানাতে তিন লিটার তেল লাগত। এখন ৬০০ পরোটা বানাতে একই তেল লাগে।’
স্যালাইন পদ্মতির বুদ্ধিদাতা রুহুল পণ্ডিত বলেন, ‘তেলের এমন সংকটের সময় হোটেলগুলোতে এর অপচয় রোধ করতে এমন চিন্তা করেছি। স্থানীয় বাজার থেকে স্যালাইনের পাইপ কিনে এনে সেট করে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে। অনেকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে। পদ্ধতিটা আরেকটু আধুনিক করলে হোটেলগুলোয় তেলের অপচয় কম হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে।’
সদর উপজেলার ইউএনও বলেন, সয়াবিনের অপচয় রোধে এমন সাশ্রয়ী পদ্ধতি ব্যবহার সত্যিই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। তবে আমরা সার্বক্ষণিক বাজার মনিটর করছি। তেল বিক্রিতে যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানেই জরিমানা করা হচ্ছে।’
সরকারের বেঁধে দেয়া দামের বেশি যেন কেউ তেল বিক্রি না করে সে জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।