বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন জোটের চেষ্টায় বিএনপির তিন ‘বন্ধু’, আছে ১৪ দলের শরিকও

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২২ ১৯:২৪

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিলুপ্ত না করে নতুন জোট গঠন হলে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের কী হবে- এমন প্রশ্নে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এখন তো ঠিক সে রকম ফাংশন নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাক; আমরা জোট যদি বানাতে পারি, অসুবিধা কী? বিএনপি নিজেও তো মনে করছে সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর জোট করবে।’

গত জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তিন শরিক নতুন জোট গঠনের আলোচনা শুরু করেছে। এ জোটে থেকে পরে ভোট শেষে বের হয়ে যাওয়া আরও একটি দলকেও রাখা হচ্ছে এই উদ্যোগে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন দৃশ্যত অকার্যকর হয়ে গেলেও সেটি ভেঙে দেয়া হয়নি এখনও। এর মধ্যে নতুন জোট গঠনের এই প্রচেষ্টার বিষয়ে বিএনপির কাছে কোনো তথ্য নেই।

এই জোট গঠনের উদ্যোগে অংশীদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট ১৪ দলের এক শরিকও। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগেরও কোনো ধারণা নেই।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে মোকাবিলায় বিএনপি ২০ দলের পাশাপাশি গঠন করে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর অংশীদার হয় গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ব্যক্তি হিসেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।

নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এই জোট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিএনপির মতভিন্নতার বিষয়টি আর গোপন নেই। সেই সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না নানা সময় বিএনপিকে নিয়ে হতাশার কথা বলেছেন। বলেছেন, তারা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগকে চান না, কিন্তু বিএনপিকে চান- এমনটিও নয়।

গণফোরামের সঙ্গে বিএনপির কোনো ধরনের দৃশ্যমান যোগাযোগ নেই। আর জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী সম্প্রতি প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘আমি গাধা বলে ঐক্যফ্রন্টে গিয়েছিলাম।’

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের মান-অভিমান ও দূরত্ব নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গণফোরামের একাংশ, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, জনতা লীগ নতুন করে একটি জোট গঠন করতে চাইছে, যাতে রাখা হচ্ছে বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, বিকল্প ধারার একাংশ এবং ১৪ দলের শরিক শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদকে।

‘এই জোট বিএনপির বাইরে’

গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট তো ভাঙা হয়নি, তবে এটা নিষ্ক্রিয়। এখন অন্য যে ছোট দলগুলো আছে অপজিশনে, তারা মিলে একটা ছোট দল গঠন করতেছি।’

বিএনপির বাইরে গিয়ে এই জোট?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। তবে জাতীয় ঐক্য হলে সেটা দেখা যাবে।’

এই উদ্যোগে কারা আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আ স ম রব সাহেব, মান্না সাহেব, কাদের সিদ্দিকী সাহেব, বিকল্প ধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, পিপলস পার্টির সঙ্গে গঠনে আলাপ-আলোচনা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।’

এ জোটের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলছি শুধু ইলেকশন না, ইলেকশন প্লাস। কল্যাণ রাষ্ট্র যে ল্যাঙ্গুয়েজে বলি, সেটি গঠন। দেশে চার কোটি মানুষ বেকার, এগুলো দেখতে হবে। এগুলো ইলেকশনের টার্গেটের মধ্যেই আছে।

‘পরিবর্তন বলতে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন বোঝাচ্ছি না। একটা ভোট হলেই সব হয়ে যাবে না। একেক জনের একেক রকম ভাবনা আছে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিলুপ্ত না করে নতুন জোট গঠন হলে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এখন তো ঠিক সে রকম ফাংশন নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাক; আমরা জোট যদি বানাতে পারি, অসুবিধা কী? বিএনপি নিজেও তো মনে করছে সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর জোট করবে।’

বিএনপি জানে না, তবে সমস্যাও দেখছেন না ফখরুল

জোটসঙ্গীদের নতুন জোটের এই উদ্যোগের সম্পর্কে কোনো তথ্য যে কি না- এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টতই জানেন না।

এই উদ্যোগকে তাহলে কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘করতে পারে, সবাই সবারটা করতে পারে। সবাই তো ইনডিপেনডেন্ট দল, আমাদের এটা খারাপ-ভালো বলার কিছু নয়। ২০ দল থাকতেও আমরা ঐক্যফ্রন্ট করেছিলাম।’

ঐক্যফ্রন্টের কার্যকারিতা বা ভবিষ্যতে কোনো সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি করবে কি না- ‘এটা আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যাবে।’

ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না- এ বিষয়টিও মানতে নারাজ ফখরুল। উল্টো প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে আমাদের সম্পর্ক ভালো না?’

ঐক্যফ্রন্টের নেতারাই তো বলছেন- বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা তো বলিনি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো না। এটা আপনারা বলছেন।’

ঐক্যবদ্ধ কোনো কর্মসূচি তো নেই- এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আসলে পার্টির ডিসিশন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট বলেন আর জোট বলেন, কারও সঙ্গেই আমাদের খারাপ সম্পর্ক নেই। অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক আছে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘বিএনপি এখন আমাকে দাওয়াত দেয় না’, জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ‘বিএনপি আমার ওপরে ক্ষ্যাপা’।

এসব মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব বাজে কথা। মান্না সাহেব কোনোদিন এ ধরনের কথা বলেনি। এটা আপনাদের ভুল ধারণা।’

অন্য এক প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা কী করব, সময়মতো সব আপনারা জানতে পারবেন। পলিটিকস ইজ নট এ স্ট্যাটিক থিং৷ এটা হচ্ছে সব সময় বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রাজনীতি। অপেক্ষা করুন সামনে সময় এলে সব দেখতে পারবেন।’

কামাল হোসেন বা আ স ম আবদুর রবদের সঙ্গে বিনপির দূরত্ব আছে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপির জোটের সমন্বয়কদের একজন নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমার কাছে তো মনে হয়নি। আপনাদের মনে হলে অন্য কারও কাছ থেকে ক্লিয়ার করেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আলাদা আলাদা পার্টি; তবে আমাদের লক্ষ্য তো একটাই। আমরা এখন ওইভাবে ফ্রন্ট জোট গঠন করিনি। সবাই ওইভাবে থাকবে। এখন যার যার অবস্থান থেকে করছে। কিন্তু লক্ষ্য তো একটাই সরকারের পতন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন। আসল জায়গায় তো সবাই ঠিক আছে।’

১৪ দলের শরিক কেন

আওয়ামী লীগবিরোধীদের সঙ্গে জোট গড়ার আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের শরিক জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আলোচনা করছি। তবে এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ’

১৪ দলের শরিক জোট হয়ে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে গিয়ে জোটের চেষ্টা কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘১৪ দল একটা অতীত। এটা নিয়ে আর কিছু করার নেই।

‘মাঝেমধ্যে এরা দিবস উদযাপন করে। আবার মিটিংয়ে বসে শুধু আওয়ামী লীগের গুণকীর্তন করে। এটার কোনো কার্যকারিতা নেই।’

১৪ দলের মিটিংয়ে যাওয়া হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৪ দল স্থগিত করে দেয়া ভালো। কন্টিনিউ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা সবকিছু নতুন করে চিন্তাভাবনা করছি।’

২০১৬ সালের শেষ দিকে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে আম্বিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর আম্বিয়ার নেতৃত্বে একই নামে নতুন দল গঠন হয়।

আম্বিয়া গত জাতীয় নির্বাচনে নড়াইল-১ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন। তাকে প্রথমে মনোনয়ন না দিলেও পরে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল হক মুক্তির অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করলে সেই মনোনয়ন আবার পাল্টানো হয়।

ফখরুলের মতোই শরিকের ছুটে যাওয়ার চেষ্টা জানে না আ.লীগ

নিজের শরিক দলের আওয়ামী লীগবিরোধী জোটের অংশ হওয়ার এই চেষ্টার বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমুর কাছে কোনো তথ্য নেই।

বিষয়টি নিয়ে জানেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, না, এ বিষয়ে কোনো কিছু জানি না।’

আপনার প্রতিক্রিয়া কী- এই প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেন আমু।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফও বলেছেন, আম্বিয়ার আওয়ামী লীগবিরোধী জোটের অংশ হওয়ার চেষ্টা তার জানা নেই।

এ বিভাগের আরো খবর