কৃষক পরিবারের সন্তান সেলিম হোসাইন। অভাবের সংসারের হাল ধরতে এক সময় পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি নিজের চেষ্টায় সেখানেই করেছেন পড়ালেখা। শেষ পর্যন্ত হয়েছেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বরগাছা ইউনিয়নের মালশন গ্রামের জহুরুল হকের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় সেলিম হোসাইন।
২০০৫ সালে স্থানীয় মালশন গিরিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিকে এসএসসি এবং ২০০৭ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন সেলিম। সে বছরই সেলিম কাজের উদ্দেশ্যে যান মালোয়েশিয়া।
২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেজুরুতেরা এইচ এস এসএনডি বিএইচড কোম্পানিতে সহকারী অপারেটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হওয়ায় সেলিম সে সময়ে সহকারী প্রোগ্রামার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত অলস্পট ইন্ডাস্ট্রি এসএন বিএইচডি কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেছেন। কাজের পাশাপাশি পরিকল্পনা করেন প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা ও ডিগ্রি নেয়ার।
সে সময় বাড়ি আসলে এক দুর্ঘটনায় হাতে আঘাত পান। যার কারণে দেশে এসে ১ বছর ৭ মাস চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। পরে আবার মালয়েশিয়ায় গিয়ে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটিতে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ার ম্যালভার্ন ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হয়ে কম্পিউটারে ডিপ্লোমা শেষ করেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে।
২০১৯ সালের শুরুতে মালয়েশিয়ার সনামধন্য লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন।
নিজে কাজ করলেও যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পেতেদন না বলে জানান সেলিম হোসাইন। বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিরামহীনভাবে কাজ করে গেছি জীবিকার তাগিতে। আমি সেভাবে বেতন বা সন্মানী পেতাম না, শুরুতে বেতন ছিল মাত্র ৯ হাজার ৬২০ টাকা।’
সেলিম বলেন, ‘৬ বছর ৬ মাস প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। তখন থেকেই পরিকল্পনা ছিল পড়াশোনা করে আমাকে আরও ভালো কাজ করতে হবে। পরে ২০১৫ সালে ম্যালভার্ন ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হয়ে কম্পিউটারে ডিপ্লোমা শেষ করি ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরে ২০১৯ সালের শুরুতে মালয়েশিয়ার সুনামধন্য লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করি।’
সেলিম বলেন, ‘খুব কষ্টে গেছে সময়। সেখানে পড়াশোনা আর দেশে পরিবারের দেখাশোনা। অবশ্য সেই কষ্ট এখন লাঘব হয়েছে। সুখের সময় এসেছে পরিবারে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সেলিম জানান, তিনি এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। অল্প দিনের মধ্যে আবার মালয়েশিয়ায় যাবেন, গত মাসে সেখানে ইউনিভার্সিটি কেবাংসানতে (ইউকেএম) কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। আগামী ২৫ তারিখ থেকে ক্লাশ শুরু হবে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পেশা গড়ার ইচ্ছে রয়েছে তার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। দেশেই তরুণদের জন্য আইটি ফার্ম করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। যেন দেশের তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারি।’