বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইটভাটায় পুড়ছে নোয়াখালী

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ মার্চ, ২০২২ ১৯:০১

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে নোয়াখালীর বৈধ-অবৈধ ১৫৪টি ইটভাটা। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইটের জন্য পোড়ানো হচ্ছে উর্বর মাটি, কয়লার বদলে ইটের চুল্লিতে দেয়া হচ্ছে কাঠ।

নোয়াখালীতে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দেড় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি। এতে অস্বাভাবিকভাবে কমছে জেলার কৃষিজমি। ইট বানাতে খনিজ কয়লা ব্যবহারে সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকলেও পোড়ানো হচ্ছে গাছ।

এ ছাড়া ট্রাক্টরে বিরামহীন মাটি পরিবহনে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক। ইটভাটার ধোঁয়ায় ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।

সুবর্ণচরের দুলাল মিয়া জানান, ইটভাটার ক্ষতিকর ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগে ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও গাছের ফলফলাদির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে উপজেলার প্রায় ১০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক।

এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নোয়াখালী আঞ্চলিক অফিস, উপজেলা কৃষি অফিস, বন বিভাগ এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, পরিদর্শন না করেই ছাড়পত্র দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আর তিন ফসলি জমিকে অনাবাদি দেখিয়ে ছাড়পত্র দিচ্ছে কৃষি বিভাগও।

ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৯-এর তথ্য থেকে জানা যায়, ফসলি জমিতে কোনো ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। এলজিইডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবে না। কাঠ পোড়ানো যাবে না। লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনের সঙ্গে ইট প্রস্তুতের মাটির উৎস উল্লেখ করে হলফনামা দাখিল করা বাধ্যতামূলক। নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত সালফার, অ্যাশ, মারকারি বা অনুরূপ উপাদান-সংবলিত কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এ আইন অমান্যকারীদের দুই বছরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (এনআরডিএস) প্রধান নির্বাহী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন মানছেন না ভাটার মালিকরা। তারা তথ্য গোপন করে আধুনিক পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের অনুমোদন নিলেও বাস্তবে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করছেন। মাঝে মাঝে এসব ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করা হলেও থামছে না অবৈধ কার্যক্রম।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীতে ১৫৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ ভাটা ৬৭টি এবং অবৈধ ৮৭টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার এক কারিগর জানান, একটি কাচা ইট তৈরিতে মাটি লাগে ০.০৮৫ ঘনফুট। প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি ভাটায় কমপক্ষে গড়ে ৮ রাউন্ড ইট পোড়ানো হয়। প্রতি রাউন্ডে ১০ লাখ ইট থাকে। একটি ভাটায় বছরে কমপক্ষে ৮০ লাখ ইট পোড়ানো হয়।

কারিগরদের হিসাবে জেলায় ১৫৪টি ইটভাটায় বছরে প্রায় ১২৪ কোটি ইট তৈরিতে ১১ কোটি ঘনফুট মাটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ইটভাটা স্থাপনে অনুমোদিত জমি তিন একর হলেও ভাটার মালিকরা ব্যবহার করছেন কমপক্ষে ৯-১০ একর। সে হিসাবে ইটভাটার নিচে চলে গেছে প্রায় দেড় হাজার একর জমি।

সুবর্ণচর উপজেলার সিরাজ উদ্দিন জানান, কিছু ইটের ভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র, কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, বিএসটিআই ইত্যাদির অনুমোদন কাগজে বৈধ। অথচ বৈধ ও অবৈধ সবারই ইট তৈরি প্রক্রিয়া, ভাটা স্থাপন এলাকা, জ্বালানি ব্যবহার, মাটি সংগ্রহ প্রক্রিয়া- সবই অবৈধ।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতি সর্ববিদ্যা বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করেননি। ইটভাটার অনুমোদন ও বৈধ-অবৈধতা জেলা প্রশাসন দেখে। এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।’

সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান, তার ক্ষেতের পাশে ইটের ভাটা। রাত-দিন সেখানে পুড়ছে ইট, উড়ছে ধোঁয়া আর গ্রামের প্রতিটি কাঁচা-পাকা সড়কে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাটিবাহী ট্রাক্টরের ভয়ংকর শব্দ। ইটভাটার ধোঁয়া, ধুলোবালি এবং গাড়ি চলাচলে গ্রামবাসী অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি ভাটায় কমপক্ষে ৩০-৪০ ট্রাক্টর মাটি ঢোকে। গ্রামজুড়ে যেন মাটি কাটার উৎসব চলছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে চরমটুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কামাল উদ্দিন বাবলুর ফোনে একাধিকবার কল ও বার্তা দেয়া হলে তিনি উত্তর দেননি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার বিষয় ডিসি নিয়ন্ত্রণ করেন। ওনাদের ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, পুলিশ সব আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছুই নেই। আমরা ওনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করি। অনেকে না জেনেই আমাদের ওপর দায় চাপায়।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ মিয়া বলেন, ‘ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ বা লাকড়ি ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহিদুল হক বলেন, আমরা চাই না ইটের ভাটা হোক। তার পরও জেলা প্রশাসন অনুমোদন দিলে আমাদের তো কিছু করার থাকে না। ফসলি জমিতে ইটভাটার জন্য কোনো ছাড়পত্র না দিতে আমাদের নির্দেশনা আছে।’

নোয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক বলেন, ‘গ্রামীণ সড়কগুলো ইটভাটার মাটি পরিবহনের ট্রাক্টরের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা কীভাবে এটা বন্ধ করব? ইটভাটা অনুমোদনের জন্য যে কমিটি আছে তাতে তো স্থানীয় সরকার বিভাগের কেউ নেই।’

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সব উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ এবং ছাড়পত্র নবায়নহীন ইটভাটায় ধারাবাহিকভাবে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এর পরও এসব অবৈধ এবং ছাড়পত্র নবায়নহীন ইটভাটা নিয়মের মধ্যে না আসলে এগুলো ধ্বংস করে দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর