গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও তীর সংরক্ষণে সীমান্ত নদী মহানন্দার ৫ কিলোমিটার এলাকায় খনন ও পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত সম্বলিত একটি চিঠি বিজিবি ১৮, পঞ্চগড় পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে পাঠিয়েছে। তবে একটি মহল প্রশাসনের এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাথর উত্তোলনের পায়তারা করছেন বলে জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, নদীর তীরের ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিসি ব্লক নির্মাণ বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের পুরোনো ডাক বাংলো ভবন, পিকনিক কর্নার, কবরস্থান, ঈদগামাঠ, থানা ভবন, পুরাতন বাজার, শিবমন্দিরসহ প্রায় ৭০০ একর আবাদি জমি। ডাকবাংলো থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত ওই ৫ কিলোমিটার এলাকার স্থাপনাগুলো ভবিষ্যতে মহানন্দার কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে। তাই সেখানে নদী খনন ও পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে এলাকার পাথর শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কাছে নদীর মধ্যে পাথর উত্তোলন চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিজিবি তেঁতুলিয়া কোম্পানি সদর থেকে জানানো হয়, তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পায়নি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ ধরনের চিঠি ক্যাম্পে পাঠানো হলেও বিজিবি সদর কোম্পানি সুবেদার তা গ্রহন করেননি, পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক মহানন্দায় পাথর উত্তোলন করে জীবন চালিয়ে আসছে। হঠাৎ করে একটি সীমানায় পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে জেলার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এটি মানতেই হচ্ছে।’
পুরাতন বাজার এলাকার পাথর ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন জানান, তার পাথর কোয়ারির প্রায় ৮০০ শ্রমিক প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন।
তেঁতুলিয়ার সর্দার পাড়া গ্রামের মরিয়ম, জোসনা, রাবেয়া ও দর্জি পাড়া গ্রামের শাহেরা বেওয়া বলেন, ‘মহানন্দার পাথর বাছাই ও নেটিং করেই আমাদের সংসার চলে। এখন পাথর তোলা বন্ধ হওয়ায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড পঞ্চগড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, ‘নদীর তীর সংরক্ষণসহ জাতীয় স্থাপনা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের চিঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড পেলে সরেজমিন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মহানন্দা নদীতে ডাকবাংলো থেকে তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার পর্যন্ত তীর সংরক্ষণের বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙ্গে পড়েছে। এ অবস্থায় ১৮ কিলোমিটার নদীর ৫ কিলোমিটার এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তবে বাকি এলাকা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। উপজেলার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’