বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধোঁয়া না ছেড়ে ধূমপানে চাপ, পরে পিটুনি ছাত্রলীগের

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২২ ১৪:৪৯

হলের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেট খেতে বাধ্য করা এবং খেতে না চাইলে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হলটির ২০১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ছাত্রের নাম আবু তালিব। তিনি অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন।

অভিযুক্তরা হলেন, সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন। তারা সবাই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

হলের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।

হল ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হলের অতিথি কক্ষে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের গেস্টরুমে নেয় তৃতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ‘ফরমাল গেস্টরুম’ নামে পরিচিত। এরপর সাড়ে ১২টায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ২০১ নম্বর রুমে ডাকেন অভিযুক্তরা।

শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ‘মিনি গেস্টরুম’ নামে পরিচিত। মূলত জুনিয়রদের বিভিন্ন ‘অপরাধে’ শাস্তি দেয়ার জন্য মিনি গেস্টরুমে ডাকা হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভুক্তভোগী ছাত্রকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয়বর্ষের এক ছাত্র নিউজবাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী তালিব সিগারেট হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর থেকে হলের দিকে আসছিলেন। এ সময় তালিব লক্ষ করেন সূর্যসেন হলের সামনে তার জ্যেষ্ঠ শেখ শান্ত আলম (অভিযুক্ত) দাঁড়ানো। তালিবের হাতে সিগারেট থাকায় শান্তকে এড়িয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে হলে আসেন। এ ঘটনা লক্ষ করেন অভিযুক্ত শান্ত। এটিকে অপমান মনে করে হলে এসে রাত সাড়ে ১২টায় দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীদের মিনি গেস্টরুমে ডাকেন শান্ত এবং তার বন্ধুরা।

ঘটনার সময় সেই রুমে উপস্থিত দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ‘শান্ত ভাইকে এড়িয়ে যাওয়ার শাস্তি হিসেবে আমার বন্ধু তালিবের মুখে জোর করে সিগারেট জ্বালিয়ে দেয়। হাত দিয়ে ধরা ছাড়া, মুখ থেকে নামানো ছাড়া, মুখ দিয়ে ধোঁয়া না ছেড়ে পুরো সিগারেট খেতে বলেন শান্ত ও বাঁধন ভাই। এতে অপারগতা প্রকাশ করলে রুমে থাকা স্টাম্প দিয়ে তালিবের পায়ে আঘাত করেন শান্ত ভাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্র বলেন, “এ সময় তালিবের হাত পেছনের দিকে রাখতে বাধ্য করা হয়। জ্বলন্ত সিগারেট মুখে, আর তার সব ধোঁয়া নাক দিয়ে যাচ্ছিল। এতে কেঁদে দেয় তালিব। তালিবের এই কান্না নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন অভিযুক্তরা। ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ করে বাঁধন ভাই বলেন, ‘ক্যান্দস ক্যান? তুই মেয়ে নাকি?’ এভাবে সিগারেটের দুই-তৃতীয়াংশ মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করা ছাড়া খেতে বাধ্য করা হয় তালিবকে।”

হলটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত এই চারজনই গেস্টরুমে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেন। তাদের নির্যাতনের ভয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী এরই মধ্যে হল ছেড়ে দিয়েছেন।

তারা জানান, গত ৮ মার্চ প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে দ্বিতীয় বর্ষের ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের রুমে ৩০১ (ক) তালা দিয়ে রাখা হয়। ফলে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন হলে ঘুরে ঘুরে রাত কাটাতে হচ্ছে।

নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ শান্ত আলম বলেন, ‘গতকাল আমি কোনো গেস্টরুমেই ছিলাম না। আমি হলেই ছিলাম না, মেডিক্যালে ছিলাম। হাজার হাজার বই কিনছি। আমি এখন পড়তেছি। যেহেতু আমার নাম আসছে আমি মনে করি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হচ্ছে।’

রুম তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সেই রুমে থাকত, তারা এখন হলে নেই। হয়তো সবাই বাড়ি চলে গেছে। তাই যাওয়ার সময় তারাই হয়তো তালা মেরে গেছে।’

আরেক অভিযুক্ত ইমদাদুল হক বাঁধন বলেন, ‘আমাদের হলে গতকাল এ রকম কিছুই হয়নি। তাকে (তালিব) কোনো নির্যাতনও করা হয়নি। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন আমরা আমাদের রুমে ছিলাম।’

রুম তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সিনিয়রদের বিষয়। ওনারা সিট ডিলিংস করেন। ওনারাই জানেন এ বিষয়ে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত অন্য ছাত্রদের কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।

এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তও ফোন রিসিভ করেননি।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। যে রুমে এ ঘটনা সেই ব্লকের হাউস টিউটররা এটি দেখছে। আমরা গেস্টরুম এবং কমন প্লেসগুলোর সিসি ফুটেজগুলো দেখছি। এসবের ফুটেজ আমি মোবাইল দিয়েও দেখতে পাই। তবে রুমের মধ্যে হওয়ায় এটি এখন খোঁজ নিয়ে বের করতে হবে।’

মোবাইলে দেখতে পেলে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রেখে গেস্টরুমে যা হয় সেটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কেন নেয়া হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দেখি কেউ বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তারা কথা বলছে। কিন্তু আমি তো একই লোক বারবার দেখি না। এখন থেকে আমি প্রতিদিন দেখার চেষ্টা করব।’

রুম তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যে রুমটি তালাবদ্ধ করার বিষয়ে বলা হচ্ছে, আজকে সকালে দেখলাম সেটি খোলা। আমরা হাতেনাতে ধরতে পারছি না। এই জায়গায় সমস্যাটা হয়ে গেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর