বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালী নদী থেকে স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে শুক্রবার ভোরে মরদেহটি ভাসতে দেখে তীরে নিয়ে আসে। পরে পুলিশ ও স্বজনরা গিয়ে সেটি নিখোঁজ সূর্য ঘোষের বলে নিশ্চিত করে।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার নিউজবাংলাকে এসব জানিয়েছেন।
তিনি জানায়, শিক্ষাসফরে গিয়ে নদীতে নেমে বৃহস্পতিবার নিখোঁজ হয় সূর্য।
জেলে জামাল হোসেন জানান, পাথরঘাটার লালদিয়ার চরে তিনি ও কয়েকজন শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে মাছ ধরতে যান।
জামাল বলেন, ‘ভোরে জাল টানতে ছিলাম। আকাশ পরিস্কার হওয়ার পর জালের কাছাকাছি দেখা যায়, মানুষের মতো ভাসছে। জাল টানা বন্ধ করে কাছে গিয়ে দেখি একটি শিশুর মরদেহ। পরে মরদেহটি উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসি।’
ওসি আবুল বাশার জানান, পাথরঘাটার হরিণঘাটা ইকোপার্কে শিক্ষাসফরে বৃহস্পতিবার আসে বরগুনা সৃষ্টি বিজ্ঞান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পার্কের পাশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুপুরে সাঁতার কাটতে নামে প্রতিষ্ঠানটির সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সূর্য। এরপর থেকে তাকে পাওয়া যায়নি।
সূর্য বরগুনা শহরের ডিকেপি সড়কের পিযুষ ঘোষের ছেলে।
ওই স্কুলের অধ্যক্ষ প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বরগুনা থেকে লঞ্চে করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাথরঘাটার হরিণঘাটা পর্যটনকেন্দ্রে যাই। সেখানে লালদিয়ার চর এলাকায় রান্নাবান্নার কাজ চলে। শিক্ষার্থীরা তখন দলবেঁধে ঘোরাঘুরি করে।
‘সূর্যসহ কয়েক ছাত্র ফুটবল খেলছিল। এরপর তারা নদীতে গোসল করতে নামে। তীরে উঠে আসার পর সূর্য নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি। গোসল করতে গিয়ে কখন সে স্রোতের মধ্যে হারিয়েছে, তা সবার অজানা।’
সূর্যের মৃত্যুর ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ তার পরিবার।
সূর্যের বড়ভাই সাগর ঘোষ বলেন, ‘আমরা সূর্যকে পাঠাতে চাইনি, কারণ ও সাঁতার জানে না। ওই স্কুলের পরিচালক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস দায়িত্ব নিয়ে সূর্যকে নিয়ে যান। এরপর আমার মা একাধিকবার ফোন করে সূর্যর খোঁজখবর নেন।
‘দুপুর সাড়ে ১২ টার পর আর সূর্যকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। শিক্ষকরাও ফোন ধরেনি। বিকেল ৩টার দিকে এক শিক্ষক ফোনে জানান যে সূর্যকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিকেল ৫ টার দিকে আবার জানায়, সূর্যকে পাওয়া গেছে এবং বরগুনা নিয়ে আসা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সবাই ট্রলারে ফিরে আসলে আমরা ঘাটে গিয়ে দেখি সূর্য আসেনি। শিক্ষকরা কিছু না বলেই চলে যায়। পরে আমার বাবা ও কাকা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন সূর্যকে পাওয়া যায়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূর্যের কয়েক সহপাঠি জানান, দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সাঁতার জানা ও সাঁতার না জানা দুটি গ্রুপ করে দেয়া হয়। যারা সাঁতার জানে তারা নদীতে নামে, অন্যরা ফুটবল খেলতে থাকে। সূর্যকে সাঁতার জানাদের দলে দেয়া হয়। সাঁতার শেষে সবাই ফিরলেও সূর্য ফেরেনি। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। তবে সন্ধ্যা নাগাদ তাকে না পেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকরা ফিরে আসে।
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গির মল্লিক জানান, পরিবারে পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।