বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দরিদ্রদের বিনামূল্যে সবজি দেন ইব্রাহীম

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২২ ১৩:৫৩

বাজারের মাছ ও মুরগি ব্যবসায়ী মো. ইলিয়ান বলেন, ‘তিন মাস আগে ইব্রাহীম সবজির দোকান দেন। দুই মাস ধরে তিনি বিনামূল্যে কিছু সবজি দেয়া শুরু করেন। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, বর্তমান সমাজে এমনটা দেখা যায় না।’

শিম, টম্যাটো, মিষ্টি কুমড়া, আলু, বেগুনসহ নানা ধরনের সবজি ডালায় সাজানো। প্রথম দেখাতেই কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে এটি একটি সবজির দোকান।

দোকানের সামনে এ-ফোর সাইজের লেমিনেটিং করা একটি কাগজ রশিতে আটকানো। তাতে লেখা, ‘যাদের সবজি কেনার সামর্থ্য নেই, তারা আমার দোকান থেকে বিনামূল্যে কিছু সবজি নিতে পারেন।’

সম্প্রতি এমনি একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেসবুকে আলোচিত এই দোকানটি চট্টগ্রামের গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটির কাঁচাবাজারে। সেখানে গিয়ে কথা হয় দোকানমালিক মো. ইব্রাহীমের সঙ্গে।

তিনি নিউজবাংলাকে জানান, বিভিন্ন সময় মানুষ একটু বেশি মূল্যের সবজির দাম জিজ্ঞেস করেন, কিন্তু না কিনে চলে যান। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝতে পারেন, মূলত সামর্থ্য না থাকায় তারা কিনতে পারেন না। তাই মাস দুয়েক আগে তার মনে হয়েছে, মোট উপার্জন থেকে প্রতিদিন কিছু টাকার সবজি যদি সামর্থ্যহীন মানুষকে দেয়া যায়, তাহলে তো দারুণ হয়।

যেই ভাবা, সেই কাজ। হঠাৎ একদিন দিনের শুরুতে দোকানের সামনে টাঙিয়ে দেন এ-ফোর সাইজের সেই কাগজ। এটা নিয়ে শুরুতে ঠাট্টা করেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা। তবে ধীরে ধীরে তারা এখন ইব্রাহীমের কাজের প্রশংসা করেন।

প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ জন মানুষকে বিনা মূল্যে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার সবজি দেন ইব্রাহীম। ছবি: নিউজবাংলা

ইব্রাহীম বলেন, ‘দোকান থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করলে ২০ শতাংশ লাভ হলেও ২ হাজার টাকা পাই। খরচ বাদ দিয়ে আমার হাতে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার মতো থাকে। এই টাকা থেকেই প্রতিদিন কিছু যাদের প্রযোজন তাদের মোট ২০০ থেকে ৩০০ টাকার সবজি বিনামূল্যে দিই।

প্রতিদিনই তো বেচা শেষে কিছু সবজি নষ্ট হয়ে যায়। সেটার খরচ তো আমাকে কেউ দেয় না। তাই কিছু ভালো সবজি সামর্থ্যহীন মানুষকে দিয়ে দিলে ক্ষতি কী?’

প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ জন মানুষ বিনামূল্যে সবজির জন্য আসেন জানিয়ে ইব্রাহীম বলেন, ‘তারা এসে কিছু বলে না, দোকানের সামনে এসে আমাকে খুঁজলেই বুঝতে পারি। এ ছাড়া অনেকে আবার এসে বেশি দামের সবজির কথা বলে সবচেয়ে কম দামের সবজি কেনেন।

‘তখন কিছু সবজি তাদেরও দিয়ে দিই। তারা আমার জন্য দোয়া করেন, এটাই তো পাওয়া। আবার কিছু মানুষ লজ্জায় আমাকে বলে না, কারও মাধ্যমে বলায়।’

কেন এই উদ্যোগ? জানতে চাইলে ইব্রাহীম বলেন, ‘করোনার সময় দেখেছি, জীবন কত কঠিন। তখন আমি ব্রুনাইতে ছিলাম, দারুস সালামে। সেখানে লোকজন দান করত, কেউ জানত না। কিন্তু ফেসবুকে দেখতাম বাংলাদেশে এক কেজি চাল দিচ্ছে ২০ জনে মিলে।

ব্রুনাইয়ে আমার জটিল একটি রোগ ধরা পড়ে, দেশে আসি হুইলচেয়ারে বসে। পুরো শরীরে হাড় ক্ষয়ে গিয়েছিল, বাঁচব ভাবিনি। আল্লাহ মৃত্যুর পথ থেকে ফিরিয়েছেন। তাই ভাবলাম, সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে মানুষের একটু উপকার করার কথা।’

বাজারের মাছ ও মুরগি ব্যবসায়ী মো. ইলিয়ান বলেন, ‘তিন মাস আগে ইব্রাহীম সবজির দোকান দেন। দুমাস ধরে তিনি বিনামূল্যে কিছু সবজি দেয়া শুরু করেন। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, বর্তমান সমাজে এমনটা দেখা যায় না।’

ইব্রাহীমের বাবা মোবারক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মরেই গিয়েছিল আমার ছেলে, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। আর্থিকভাবে আমরা খুব সচ্ছল, এমনও না। তবে সবাই মিলে যা আয় করি, তাতেই চলে যায়। ছেলের এমন কাজে বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।’

এ বিভাগের আরো খবর