বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভ্যাট প্রত্যাহারেও তেলের বাজারে সরবরাহ সংকট

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২২ ১১:৫৩

হাতিরপুল বাজারের ভাই ভাই স্টোরের হালিম জানান, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লিটার তেলের দরকার হলেও দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ লিটার। চাইলেই বলে দাম বাড়বে। তাই সরবরাহ বন্ধ আছে। পাইকারি বাজারেও তেলের সরবরাহ কম। কারওয়ান বাজারের দ্বিতীয় তলার তেল ব্যবসায়ী শওকত মিয়া বলেন, ‘দোকান ফাঁকা, তেল নেই। চাইলে দেয় না, বলে দেরি হবে।’

ভোক্তাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ভোজ্যতেল আমদানি ও খুচরা মূল্যে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার, তবে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি বাজারে।

দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ এখনও কম। পাইকারি দোকানিরা বলছেন, মিল থেকে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না এখনও। অবশ্য মিল মালিকরা এই অভিযোগ কখনও স্বীকার করেননি।

বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে স্থানীয় বাজারে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে সয়াবিনের মূল্য। গত ১ মার্চ থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে সরকারকে চিঠি দিয়েছিল ভোজ্যতেল পরিবেশকরা। তবে সরকার এতে সায় দেয়নি।

দাম বাড়াতে না পারার পর তেলের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ার অভিযোগ করতে থাকেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা বিক্রেতারাও চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছিলেন না।

আরেকটি অস্বাভাবিক চিত্র দেখা দিয়েছে। সেটি হলো তেল কিনতে গেলে সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা, যার কোনো আইনি সুযোগ আসলে নেই।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে তাদেরকেও এই শর্ত দেয়া হচ্ছে, তাই তারা ক্রেতাদেরকে একই কথা বলছেন।

এই অবস্থায় সরকার আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এখনও এই আদেশ জারি হয়নি প্রজ্ঞাপন আকারে।

এই সিদ্ধন্তের ফলে তেলের বাজারজাতকরণ খরচ কিছুটা কমবে। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের দাম নিলেও তাদের মুনাফা বাড়বে।

তবে পরের দিন শুক্রবার বাজারগুলোতে তেলের সরবরাহ নিয়ে আগের যে অভিযোগগুলো পাওয়া যাচ্ছিল, তার কোনো হেরফের হয়নি।

কী বলছেন ব্যবসায়ীরা

মোহাম্মদপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, দাম কমেনি; বরং তেলই নেই বাজারে।

শেওড়াপাড়া বাজারের মুদি দোকানি লোকমান হোসেন জানান, ‘নতুন করে কোনো তেল আসেনি।’

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী হারুন মিয়া জানান, ‘নতুন তেল সরবরাহ করা হয়নি।’

পণ্যের দাম কমানোর অন্যতম অস্ত্র শুল্ক প্রত্যাহার। সেই কৌশলই নিয়েছে সরকার, তবে এর সুফল কবে পাবে ক্রেতা, তার দিনক্ষণ নেই।

কারওয়ান বাজারে শুক্রবার এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকায়, তবে সরবরাহ সংকটের কথা বলে কোনে কোনে স্থানে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এ তেল।

খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকায়।

টিসিবির তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ লিটার বোতলে দাম বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।

তেলের জন্য হাহাকার

হাতিরপুল বাজারের ভাই ভাই স্টোরের হালিম জানান, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লিটার তেলের দরকার হলেও দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ লিটার। চাইলেই বলে দাম বাড়বে। তাই সরবরাহ বন্ধ আছে।

তিনি জানান, সব কোম্পানি তেল দেয় না। আগে ৪ থেকে ৫টি কোম্পানি তেল সরবরাহ করলেও এখন দেয় ১ থেকে ২টি কোম্পানি।

পাইকারি বাজারেও তেলের সরবরাহ কম। কারওয়ান বাজারের দ্বিতীয় তলার তেল ব্যবসায়ী শওকত মিয়া বলেন, ‘দোকান ফাঁকা, তেল নেই। চাইলে দেয় না, বলে দেরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘তেলের দোকানগুলো ফাঁকা। সপ্তাহখানেক ধরে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। মিল মালিকরা সরবরাহ না করলে, তেলের সংকট দূর করা সম্ভব না।’

কারওয়ান বাজারের অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দিনে দরকার ২০০ লিটার তেল। সরবরাহ করা হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ লিটার।’

তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য

ব্যবসায়ীরা জানান, তেল চাইলে তার সঙ্গে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে অন্য পণ্য। মোহাম্মদপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তেল দিলে তার সঙ্গে পোলাওয়ের চাল, চা পাতা, হালিম মিক্স, আটা-ময়দা নেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। না নিতে চাইলে তেল দেয়া হচ্ছে না।

তারা জানান, তেলের সংকট সৃষ্টির পর থেকে এমন আচরণ করা হচ্ছে। অনেক সময় অপ্রচলিত পণ্য নেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে। দোকানিদের ক্রেতা ধরে রাখতে তেল নিতেই হচ্ছে।

ভ্যাট প্রত্যাহার নিয়ে ধূম্রজাল

ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে তেল, ছোলা ও চিনির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পরে অর্থমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, সয়াবিন তেলে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর থেকে এখন পর্যন্ত কোনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। ফলে কোন পণ্যে ঠিক কত শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার হয়েছে, কবে থেকে তা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর