নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে জোড়ালো প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি।
দলের সাংগঠনিক বিভাগ ও জেলাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আগামী জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখা ও ইউনিটগুলোর সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন চলছে। এ মাসেই হবে কয়েকটি জেলার সম্মেলন। এভাবে তৃণমূলের শেষ করে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করবে আওয়ামী লীগ।
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল অর্থাৎ জেলা-উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিগুলোকে হালনাগাদ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সভাপতি পদে নবমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।
এই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই দলটিকে ২২তম জাতীয় সম্মেলন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্ধিত সভা, প্রতিনিধি সভা, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে নানা ধরনের সভা চলছে। উদ্দেশ্য একটাই, স্ব স্ব জেলার সম্মেলন শেষ করা। এ ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে।’
ক্রম অনুযায়ী দলটির ওয়ার্ড সম্মেলন করে ইউনিয়নের সম্মেলন করতে হয়। ইউনিয়ন-পৌরসভা পর্যায়ে শেষ করে উপজেলার এবং উপজেলার সম্মেলন শেষে জেলায় সম্মেলন করতে হয়।
ইউনিট অর্থাৎ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কমিটিগুলো কোনো না কোনো জেলা বা মহানগর কমিটির অধীনে। সেই জেলা বা মহানগর কমিটির সম্মেলন করতে হলে আগে এসব ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে হয়। জেলা ও মহানগর কমিটি সমান মর্যাদাপ্রাপ্ত।
২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় থমকে যায় দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ দুই বছরে একাধিকবার দলটি সাংগঠনিক তৎপরতার উদ্যোগ নিলেও থেমে থেমে করোনার প্রকোপে সেগুলো আর গতিশীল হয়নি।
এবার করোনার তৃতীয় ঢেউ কমে আসলে দলটির নেতারা দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়ে দেন। বিভাগীয় যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তারা বৈঠক শুরু করেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসেন খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেখান থেকে জানানো হয়, মাগুরা দিয়ে শুরু হবে জেলা সম্মেলন।
১৬ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বসেন তারা। সেদিন খুলনা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা ও অন্যান্য পর্যায়ে সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়।
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে জানান, ‘মে মাসের মধ্যে খুলনার সব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন শেষ করা হবে।’
খুলনার ধারাবাহিকতাায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট এবং ঢাকা বিভাগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করার প্রস্তুতি চলছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন গত ৪ ও ৫ মার্চ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গত ফেব্রুয়ারি এবং চলতি মার্চে প্রতি বিভাগেই এমন অনেক বৈঠক হয়। এর মধ্যেই চলতে থাকে তৃণমূলে সম্মেলন।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুনের মধ্যেই বিভাগে মেয়াদোত্তীর্ণ সবগুলো কমিটির সম্মেলন হবে।’
বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন জানান, আগামী মে মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তারা।
রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চলতি মার্চেই তার বিভাগের সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং খুলনা বিভাগ আওয়ামী লীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের আগেই তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। সব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ করছেন। প্রাকৃতিক দৈবদুর্বিপাক বাধা না হয়ে দাঁড়ালে তৃণমূল গুছিয়ে এনে নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন হবে।