গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে অনিয়ম ও সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুইয়া।
তিনি বলেন, ‘সাফারি পার্কের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমানকে।’
মামলার পর কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করবে।’
এ বিষয়ে জানতে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জেব্রাগুলোর বিষয়ে যথাসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি পার্কের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান। এছাড়া এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি, যা তবিবুরের দায়িত্বহীনতার শামিল। এমনকি সেসময় জিডিও করেননি তিনি।
এতে আরও বলা হয়েছে, মারা যাওয়া তিনটি জেব্রার পেট কাটা ও নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে থাকতে দেখা যায়। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি তখন বলেছিলেন, জেব্রাগুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মারা গেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি ও বন্যপ্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের কারণে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি হিসেবে প্রতিটি জেব্রার মূল্য ১০ লাখ টাকা করে ধরে ১১টি জেব্রার মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মোট ১১টি জেব্রা ও একটি বাঘের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘জেব্রাদের যে ঘাস খেতে দেয়া হয় সেটার মধ্যে অতিরিক্ত নাইট্রেট পাওয়া গেছে। এর প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেই জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় মামলার কথাও বলা হয়েছিল। এছাড়া তদন্ত কমিটির করা ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তও হয়েছে।
জেব্রা ও বাঘের মৃত্যুর পর ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি আফ্রিকান প্রাণী লেমুরের মৃত্যু হয়।
পার্কের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা রেজাউল করিম জানান, লেমুরটি হৃদরোগে মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।