বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আ.লীগের সম্মেলন, তাই খুলবে না দোকান, বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২২ ২২:১৬

‘গ্রামে আপনারা বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। আমাদের এই সম্মেলন ১০ বছর পর হইতাছে। আবার কবে সম্মেলন হয় তার ঠিক নাই। ব্যবসা-চাকরি প্রত্যেক দিনই করা যাইব, কিন্তু সম্মেলন তো প্রতিদিন আইত না। তাই গ্রামের সবাই ৫ ঘণ্টার লাইগ্গা দোকানপাট বন্ধ রাইখ্যা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। আইনমন্ত্রী মহোদয় খুশি হইব।’

১০ বছর পর শনিবার হতে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের।

এই সম্মেলনের দিন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পণ্য আনা-নেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমদানি-রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের ফোরকান আহমেদ খলিফা।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থল স্টেশনের ডেপুটি কমিশনারসহ ১০টি দপ্তরকে অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে।

এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।

সম্মেলনে জনসমাগম করে মন্ত্রীকে খুশি করতে সেদিন দোকানপাট বন্ধ করে স্থানীয় সব ব্যয়সায়ীকে সম্মেলনে যোগ দিতে অনুরোধ করেছেন আখাউড়া পৌরসভা মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। তিনি এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

কাজল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফার ছোট ভাই। উপজেলার নানা বিষয়ে রয়েছে তার প্রভাব।

কাজলের এমন অনুরোধে ঢেকি গিলার দশা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। দোকান বন্ধ রেখে সম্মেলনে যোগ দিলে যেমন দিনের ব্যবসায়ের ক্ষতি, তেমনি মেয়রের কথা না শুনলে পরে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় তারা।

গত ৫ মার্চ রাতে মেয়রের রাঁধানগরের বাসভবনে গ্রামবাসীর সঙ্গে তার এক সভা হয়। এতে সম্মেলনের দিন দোকান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে গ্রামবাসীকে সেখানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।

মেয়রের সেদিনের বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড এসেছে নিউজবাংলার কাছে। মেয়র সেদিন বলেন, ‘গ্রামে আপনারা বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। আমাদের এই সম্মেলন ১০ বছর পর হইতাছে। আবার কবে সম্মেলন হয় তার ঠিক নাই। ব্যবসা-চাকরি প্রত্যেক দিনই করা যাইব, কিন্তু সম্মেলন তো প্রতিদিন আইত না। তাই গ্রামের সবাই ৫ ঘণ্টার লাইগ্গা দোকানপাট বন্ধ রাইখ্যা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। আইনমন্ত্রী মহোদয় খুশি হইব।’

ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ

মেয়রের এমন অনুরোধে কারও কারও মধ্যে কাজ করছে চাপা ক্ষোভ। অনেকেই ব্যবসায়ের ক্ষতি করে যেতে চান না সম্মেলনে, আবার কারও কারও রাজনীতি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘হইব আওমী লীগের সম্মলেন, তো আমরারে দোকান বন্ধ রাখার কথা কওন লাগব কেরে? ওইখানে তো আমরার কিচ্ছু হইত না। ব্যবসা বন্ধ কইরা সম্মেলন দেখলে আমরার পেট ভরব?’

আপনি তাহলে সম্মেলনে যাচ্ছেন না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হুকুম করছে, অহন না যাইয়া উপায় আছে? না হইলে দেহা যাইব, তারার পোলাপাইন আইয়া দোকান বন্ধ কইরা দিব।’

আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নেতারা যাইব। হেইনো (সেখানে) আবার আমরারেও নিতে হইব। সকাল ৯টা থিক্কা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ রাখতে কইছে। সম্মেলনে মানুষ দেহাইয়া নেতার না হয় পেট ভরব, হেইদিন আমরার বাড়িত খাওন দিব কেডা?’

তবে আগের সেই ব্যবসায়ীর মতো তিনিও সম্মেলনে যাবেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘না গিয়া পরে ঝামেলা টানব কেডা?’

যা বলছেন আ.লীগের নেতা ও তাদের স্বজনরা

আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা কাজলের ভাই ফোরকান আহমেদ খলিফা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব ব্যবসায়ীর সম্মতের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর যদি কোনো ক্ষতিও হয়, তাহলে পরের দিন তা পুষিয়ে নেয়া যাবে।’

দোকান বন্ধের বিষয়ে তাকজিল খলিফা কাজল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে কিছু বলি নাই। আমার গ্রামের মানুষদের বলেছি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সম্মেলনে উপস্থতি থাকার জন্য।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ভূইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্মেলনের জন্য দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে দল থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যার ইচ্ছে হবে তিনি আসবেন, যারা পারবেন না, তারা আসবেন না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে না।’

আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আবদুন নূর। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলন ঘিরে আন্তর্জাতিক বন্দর বন্ধ থাকবে, বিষয়টি বেমানান। এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ সরকার অনেক শুল্ক আয় করে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেই আয় থেকে সরকারকে বঞ্চিত করার কোনো যুক্তি নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর