১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পান না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানি বাহিনী যা করেছিল, এখন আওয়ামী লীগের ভূমিকা একই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশনে ‘উত্তাল মার্চ ১৯৭১’ বিষয়ে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি গত বছর থেকে মার্চ নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে। ওই বছর ঐতিহাসিক ৭ মার্চেও আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি। তবে সেই আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমতসীন দলের সমালোচনার মুখে পড়ার পর এবার আর দিবসটিতে কর্মসূচি রাখেনি তারা।
ফখরুল বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনীর সাথে এদের পার্থক্য কোথায়? তারাও সেদিন এই অঞ্চলে বাস করা মানুষকে হত্যা করেছে, এরাও সেই একই কায়দায় হত্যা করেছে। কোনো জায়গায়, কোনো ক্ষেত্রে, কোনো খাতে তারা এই দেশের মানুষের জন্য একটা শুভ চিন্তা করছে, এটা বলতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আজকে মানুষ সড়কে নিরাপদ নয়, গৃহে নিরাপদ নয়। ন্যায়বিচার পাচ্ছে না মানুষ। এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দরকার।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা ভয়ংকর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। যে রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই রাষ্ট্রকে আজকে সম্পূর্ণভাবে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, তাদেরকে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
‘আজকে একটা রাষ্ট্র তৈরি করা হয়েছে, এই রাষ্ট্রে যারা বাস করেন, যারা রাজনীতি করেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেন, তাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। ছয় শর ওপর নেতা-কর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।’
সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে ‘রাষ্ট্রকে ফিরে পেতে’, ‘মুক্তিকে ফিরে পেতে’ আবার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বানও জানান বিএনপি নেতা।
ফখরুলের অভিযোগ, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। নিজের দলের মানুষ ছাড়া অন্য সবার অবদানকে অস্বীকার করে। কারও ভূমিকাকে স্বীকার করে না।
ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে এই সরকারকে বিদায় করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ঘোষণাও দেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আব্দুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহও আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।