বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শঙ্কা ও স্বস্তির বাজেট আসছে

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২২ ১৭:৫০

নতুন বাজেটে ভর্তুকির চাপ সামলানোই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়ে যাবে ব্যাপক। বিশ্ববাজারে ওই সব পণ্যের দাম বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব পড়েছে।

করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতি তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে। হাল অনেকটাই ফিরেছে। সেদিক থেকে স্বস্তিতে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দুশ্চিন্তার কারণ হলো করোনা যে আবার আঘাত হানবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তার ওপর ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলা বিশ্ববাসীকে নতুন করে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এর প্রভাবে অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

গত তিনটি বাজেটে ভোটের কোনো দামামা ছিল না। ফলে রাস্তাঘাটসহ এলাকার উন্নয়ন চাহিদা পূরণে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে খুব একটা চাপ ছিল না অর্থমন্ত্রীর ওপর।

এবার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তা হলো দুই বছর পর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। তাই নির্বাচনের কথা চিন্তা করে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সাজাতে হবে মুস্তফা কামালকে।

নতুন বাজেটে ভর্তুকির চাপ সামলানোই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়ে যাবে ব্যাপক। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা

রাজনীতিতে বইছে এখন নির্বাচনি হাওয়া। নতুন ইসি গঠনের পর এই হাওয়া আরও জোরদার হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

ফলে স্বভাবতই বলা যায়, নতুন বাজেটে এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না অর্থমন্ত্রী, যা ভোটারদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক হয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মূলত নতুন বাজেট হবে ভোটকেন্দ্রিক।

করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও পরিস্থিতি শঙ্কামুক্ত হয়নি। ফলে এটি মোকাবিলায় বেশি ব্যয়ের চাপ রয়েই গেছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এসব বিবেচনা মাথায় নিয়ে শঙ্কা ও স্বস্তির মধ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট দেবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।

আগামী ২ জুন বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট ঘোষণা করতে পারেন মুস্তফা কামাল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মোকাবিলাসহ অন্যান্য চাপ সামলাতে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেট। নতুন বাজেট হবে ‘সম্প্রারণমূলক’ - অর্থাৎ বড় ঘাটতি, বেশি ব্যয়ের।

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন বাজেট বা এডিপির আকার হতে পারে আড়াই লাখ কোটি টাকা কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি। নতুন বাজেটে ঘাটতি চলতি অর্থবছরের মতো ৬ শতাংশের ওপর থাকবে।

চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও মূল এডিপি থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে ভর্তুকির চাপ সামলানোই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়ে যাবে ব্যাপক। বিশ্ববাজারে ওই সব পণ্যের দাম বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব পড়েছে।

চলতি বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ভর্তুকি লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ গত অর্থবছর সার আমদানিতে ভর্তুকি লেগেছে ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে এটি ছিল ৭ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে দেশে সারের দাম না বাড়ালে এ খাতে আগামী বাজেটে তিন গুণ ভর্তুকি দিতে হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সার, বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে মোট ভর্তুকি দেয়া হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নতুন বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তবে সরকার এই ভর্তুকির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকি কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আবার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এটা করা হলে মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাতে জর্জরিত হবে জনগণ।

করোনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজটেও বাড়তি বরাদ্দ রাখতে হবে সরকারকে। করোনার টিকা কিনতে চলতি বাজেটে থোক বরাদ্দ বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়। নতুন বাজেটেও এ খাতে থোক বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হবে। তবে টাকার অঙ্ক এখনও ঠিক হয়নি।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে এবারও নিজস্ব সম্পদের ওপর জোর দিতে হচ্ছে সরকারকে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, আদায় সন্তোষজনক হলেও জানুয়ারি পর্যন্ত বিশাল ঘাটতি হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি ২৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

করোনার শঙ্কার মধ্যে আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হচ্ছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হবে।

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর