বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তোলা সেই বৃদ্ধ এবার অনশনে বসেছেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অনশন শুরু করেন বেলায়েত হোসেন নামে ওই ব্যক্তির।
তিনি অভিযোগ করেন, এমপি শওকত তার জমিতে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজের জমি ফেরত চান।
তবে এমপি শওকত জানিয়েছেন, বেলায়েতের জমির পাশে নিজ জমিতেই তিনি কাজ করছেন।
বেলায়েত জানান, তার বাড়ি পাথরঘাটার রায়হানপুর ইউনিয়নের পূর্ব লেমুয়া গ্রামে। সেখানে কাকচিড়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির সামনে কাকচিড়া-লেমুয়া সড়কের দক্ষিণ পাশে তার পৈতৃক জমি।
জমির দলিল দেখিয়ে বেলায়েত বলেন, ‘লেমুয়া মৌজার জেএল নম্বর ৪, এসএ খতিয়ান নম্বর- ৫৪০/১১৬১, দাগ নম্বর ৩১৭০ এর ৩.৫০ শতাংশ জমিটি আমার। ওই জমি নিয়ে আদালতে বণ্টন মামলা বিচারাধীন। ওই মামলায় জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করে আদেশ দিয়েছে আদালত। সেই আদেশ অমান্য করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এমপি শওকত তার অনুসারী কাকচিড়ার মাহবুব দালালকে দিয়ে ওই জমিতে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন।
‘এতে বাধা দেয়ার পর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা হয়, কিন্তু গত রোববার দুপুর ১টার দিকে আমি গিয়ে দেখি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। পরদিন পাথরঘাটা থানায় জমি দখলের লিখিত অভিযোগ করি। এর মধ্যে আমার ভাই অসুস্থ হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিয়ে যাই। ফিরে এসে দেখি গতকালও (বুধবার) ওই জমিতে কাজ চলছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছি।’
আরও পড়ুন: জমি দখল: এমপি বললেন কাগজ দেখাক ছেড়ে দেব
বেলায়েত অভিযোগ করেন, ‘দুপুর ১টার দিকে এমপির লোক আল-আমিন সৈকত এসে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে ব্যানার ছিঁড়ে উঠিয়ে দেন। পরে স্থান পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বটগাছের নিচে বসি।’
‘আমার বয়স ৬৫ বছর। আমি এই জমির বণ্টন নিয়ে মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। এখন জমিটুকু ছাড়া কোনো সম্বল নেই। আমি আমার জমি বুঝে পেতে সবার সহযোগিতা চাই।’
অপদস্থ করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল আমিন সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আর জমি দখলের বিষয়ে এমপি শওকত মুঠোফোনে বলেন, ‘বেলায়েত হোসেনের দাবি করা খতিয়ানের ৩১৭০ দাগে আমি কাজ করছি না। ৩১৭১ দাগে আমার ৫ শতাংশ জমি কেনা আছে। ওই জমিতে আমি কাজ করছি। অনশনের বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমি সব কাগজ জেলা প্রশাসক ও পাথরঘাটা থানায় দিয়েছি।’
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার লেমুয়া গ্রামে দেখা গেছে, ৩১৭০ ও ৩১৭১ দাগের দুই জমিতেই ইট-বালু রাখা। সড়কের পাশে ৩ ফুট উঁচু দেয়াল তোলার কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন। ছবি: সংগৃহীত
ওই এলাকার বাসিন্দা ও এমপি রিমনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মাহবুব দালাল বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি ওই দাগ থেকে এমপি মহোদয় রেকর্ডিয় মালিকদের অংশের ৭ শতাংশ জমি কিনেছেন। ওই জমির তার ক্রয়কৃত অংশের ৫ শতাংশ জমিতেই তিনি কাজ করছেন।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক দুপুরে বলেন, ‘আমি বেতাগী থানা পরিদর্শনে এসেছি। সেখান থেকে ফিরে বৃদ্ধের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’