ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২৬ হাজার ১৬০ আসনে ভর্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে আসলে ভবনের প্রধান ফটক আটকে দেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। ফলে ফটকের বাইরে রাস্তার ওপর বসেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রশাসন ভবনের সামনে দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তিন হাজার সিট গেল কই? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা আমার অধিকার’, ‘উই ওয়ান্ট কলেজ, উই ওয়ান্ট সাবজেক্ট’, ‘অবিলম্বে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ হাজার ১৬০টি আসন থাকার কথা বলা হলেও চূড়ান্ত মনোনয়নের পর এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হচ্ছে সেটি তাদের তথ্যগত ভুল ছিল। সাত কলেজের মোট আসন ২৩ হাজার ২৬২টি।
প্রায় তিন হাজার আসন ফাঁকা থাকার কারণে এসব আসন পূরণের দাবিতে গত মাসের শেষ দিকে শাহবাগে সমাবেশ ও চলতি মাসে নীলক্ষেত অবরোধ করেন ভর্তিচ্ছুরা।
ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২ তারিখের অবরোধ কর্মসূচির পর আমরা সেদিন সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক মাকসুদ কামাল স্যারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। স্যার সেখানেও আমাদের বলেছেন, আসনসংখ্যা ২৩ হাজার। আর ২৩ হাজারের মধ্যে ১৬০০ আসন ফাঁকা আছে। কিন্তু আজ বলা হচ্ছে ২৩ হাজারের মধ্যে মাত্র ৯০০ সিট ফাঁকা আছে। উনারা আমাদের সঙ্গে তামাশা করছেন। আমাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন।’
এদিকে আজ প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থানের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাঁচ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
বৈঠকে কী হয়েছে জানতে চাইলে আন্দোলনের সমন্বয়ক সাইফ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘স্যারদের কাছে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। কিন্তু উনারা বলছেন, আসনসংখ্যা ২৬ হাজার নয়, ২৩ হাজার। তখন এটা তাদের তথ্যগত ভুল ছিল। আর ২৩ হাজারের মধ্যে আর ৯০০ সিট ফাঁকা আছে। এসবের জন্য ২০ তারিখ মেরিট প্রকাশ করা হবে।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, “গত ২ তারিখ মাকসুদ কামাল স্যারই বলেছেন ১৬০০ আসন ফাঁকা আছে৷ আর আজ বলছেন ৯০০। ওনার এই দুই ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের আমরা হিসাব দিতে যাব কেন? তোমরা কে? বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে চলবে।’ এটা বলে উনারা চলে গেছেন।”
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল ২৬ হাজার আসন। এখন বলা হচ্ছে সেটি তাদের তথ্যগত ভুল। উনাদের ভুলের জন্য আমরা মাশুল দেব কেন? আর সেটা যদি তথ্যগত ভুলও হয় তাহলে সেটা আন্দোলনের পর জানানো হচ্ছে কেন? প্রথম মেরিট যখন প্রকাশ করা হয়েছে তখন জানানো হয়নি কেন? উনারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।’
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ভর্তির নোটিশে স্টার চিহ্নিত ছিল। যেমন গণিত বিষয়ে আসন আছে ১০০টি। সব বিভাগ মিলিয়ে এ আসন। এখন তারা যদি সায়েন্স, আর্টস, কমার্সে আলাদা আলাদা ১০০টি আসন করে ধরে তাহলে আসন হয় ৩০০। কিন্তু আসন তো মূলত ১০০টি। এটা তাদের বুঝতে হবে। তারপরও যদি তারা কথা বলতে চায় বলতে পারে। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি যেন না করে।’