কয়েক দিনের টানা উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার পর অবশেষে স্বস্তি ফিরেছে নোঙর নামের বাড়ির মানুষের মাঝে। নিরাপদে বাড়ি ফিরে এসেছেন অ্যাডিশনাল ক্যাপ্টেন মুনসুরুল আমিন খান।
ইউক্রেনে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে আটকা পড়া নাবিকদের একজন মুনসুরুল। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি সাতক্ষীরার নারকেলতলা এলাকায় নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছান।
৩৬ বছর বয়সী এই নাবিক বাড়ি ফিরে জাহাজে সেদিনের রকেট হামলার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, ‘জাহাজটি যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের, তাই আমরা ধারণা করেছিলাম, আমাদের ওপর কোনো হামলা হবে না। দুর্ভাগ্যবশত আমরা হামলার শিকার হয়েছি। ২ মার্চ ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে জাহাজে মিসাইল হামলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।
‘আমরা সবাই আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে যাই। সেই সঙ্গে কাউন্ট করি সব ক্রু ঠিক আছে কি না। তখন দেখা যায়, জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মিসিং। আগুন নেভানোর পর আমরা হাদিসুরের মরদেহ খুঁজে পাই। যেখানে মিসাইল হামলা হয়েছিল ঠিক তার পাশেই।’
- আরও পড়ুন: আমার ছেলের লাশ কোথায়: হাদিসুরের বাবা
মুনসুরুল আরও বলেন, ‘কে হামলা করেছে সেটা আমাদের জন্য বোঝা কঠিন ছিল। আমরা জানতাম না কে ঘটনাটা ঘটাল। আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই কোম্পানিকে বিষয়টা জানাই।
‘বাংলাদেশ সরকার ও শিপিং করপোরেশনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় হামলার পরদিন সকালে আমরা একটা বাংকারে ঢুকতে পেরেছিলাম। বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এখন স্বস্তি লাগলেও দুঃখ থেকেই যাচ্ছে। আমরা এক সহকর্মীকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকে আমাদের সঙ্গে জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারিনি।’
বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের অ্যাডিশনাল ক্যাপ্টেন মুনসুরুল আমিন খান। ছবি: নিউজবাংলা
ছেলেকে ফিরে পেয়ে এখন নিশ্চিন্ত মুনসুরুলের বাবা সেলিম খান।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর খবর পেয়ে মনে হচ্ছিল, ছেলে আদৌ ফিরে আসতে পারবে কি না। সেই আশাই আমাদের ছিল না। বাড়ির সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। আমার একটা মাত্র ছেলে। তার ছোট ছোট তিনটা সন্তান আছে।
‘সরকারের চেষ্টায় যুদ্ধের মধ্যেও জাহাজ থেকে নামিয়ে তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। শিপিং করপোরেশন, প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সন্তান বাড়িতে ফেরার পর যেন আনন্দের শেষ নেই।’
রোমানিয়ার বুখারেস্ট থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বুধবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক ও ক্রু।
নিহত হাদিসুরের মরদেহও দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন রোমানিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী।