বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন চালু হয়নি আজও

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২২ ০৯:৫১

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি থাকলেও নানা বাধায় দেশে এখনও মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। আবার মরণোত্তর দান করা কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ সংরক্ষণের জন্য দেশে এখনও সংরক্ষণশালা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ ও রোগীর স্বজনদের সচেতনতা জরুরি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিজুল ইসলাম মরণোত্তর অঙ্গদানের জন্য জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনে নাম তালিকাভুক্ত করেছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।

আজিজুলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য চিকিৎসকরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন, কিন্তু বাদ সাধে পরিববার।

শিক্ষকের বড় ছেলে কিডনি প্রতিস্থাপনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান। সন্তানের দাবি, বাবার মরদেহ অক্ষত রেখে দাফন করতে চান। এতে আটকে যায় কিডনি প্রতিস্থাপন। স্বজনের আবেগ আর অসচেতনতার কাছে হেরে যায় প্রতিশ্রুতি।

এদিকে যে রোগীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা ছিল, তিনিও বিপাকে পড়ে যান। কারণ তার দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করাটা জরুরি, কিন্তু প্রতিশ্রুত কিডনি না পেয়ে অস্ত্রোপচার করতে পারেননি চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি থাকলেও নানা বাধায় দেশে এখনও মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। আবার মরণোত্তর দান করা কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ সংরক্ষণের জন্য দেশে এখনও সংরক্ষণশালা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ ও রোগীর স্বজনদের সচেতনতা জরুরি।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে ১৯৯৯ সালে দেশে একটি আইন প্রণয়ন হয়। ২০১৮ সালে সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমে অঙ্গদানের সুযোগের পরিধি বাড়লেও মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।

চিকিৎসকরা বলছেন, কে মরণোত্তর অঙ্গ দান করবেন, কারা গ্রহণ করতে পারবেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটাবেজ করা হয়নি; নেই তেমন কোনো সংরক্ষণশালা। এটি বাস্তবায়নে বড় দল দরকার। সেটিও গড়ে ওঠেনি। যথাযথ অবকাঠামোও নেই। অথচ প্রতিবেশী ভারতসহ বেশ কিছু দেশে মরণোত্তর কিডনি দিয়েই ২০ শতাংশ কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।

বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এম ফখরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে, ‘দেশে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে শ্যামলীতে সিকেডি নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম এক হাজার ৫০টির মতো কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছেন।

‘করোনা শুরুর আগে বিএসএমএমইউতে সপ্তাহে একটা করে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হতো। এর বাইরে বেসরকারিভাবে ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন, অ্যাপোলো, এভারকেয়ারসহ দেশে সাত থেকে আটটি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে।’

এক বছরের মধ্যে দেশে মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। তার প্রতিষ্ঠান শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে মরণোত্তর দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপন হবে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশা করি এক বছরের মধ্যে মরণোত্তর দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে। এটা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অনেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই মিলে কাজ করলে বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত এগিয়ে যাবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘দেশে আইন থাকলেও মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন এতদিনেও শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু ও যুবসমাজের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনে বেশি জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ২২ বছরে ৩৬ কিডনি প্রতিস্থাপন

কিডনি চিকিৎসায় একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিউিউট অফ কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ২২ বছরে মাত্র ৩৬ জনের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মুহূর্তে দেশে আড়াই থেকে পৌনে তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনো মাত্রায় কিডনি রোগে ভুগছেন। এর সঙ্গে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় কিডনি হাসপাতালে এত অল্পসংখ্যক ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্বের মতো ১০ মার্চ দেশে পালন হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২২। রোগটি সম্পর্কে সচেতন করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কিডনি হেলথ ফর অল’ অর্থাৎ ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনি’।

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর শেরে বাংলানগরে ১১৬ শয্যার জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট উদ্বোধন হয়। ২০০১ সালে ৩১ মে এখানে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল প্রথম এখানে এক রোগীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়।

এরপর থেকে এখানে ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ জন রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আইসিইউ সচল না থাকা, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন অকেজো হওয়া, রোগীদের এনজিওগ্রাম ও টিস্যু টাইপিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা, এমন নানা সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়ে কার্যক্রম। সম্প্রতি নতুন করে সেবাটি চালু হয়েছে। গত এক বছরে এখানে তিনজনের দেহে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে কেন কিডনি প্রতিস্থাপন বন্ধ ছিল, সেটা বলতে পারছি না। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চিকিৎসা কেন্দ্রটিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু করছি। ইতোমধ্যে তিনজনের দেহে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছে।

‘কোভিড পরিস্থিতি না থাকলে এই সংখ্যা এতদিনে ৫০ জনে পৌঁছাত। ওমিক্রনের প্রভাব কমায় আরও তিন রোগীকে পাইপলাইনে রেখেছি। চলতি মার্চের মধ্যেই তাদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে।’

অধ্যাপক মিজানুর আরও বলেন, ‘ট্রান্সপ্ল্যান্টের পূর্বশর্ত রোগীর টিস্যু টাইপিং, এইচএলএ পরীক্ষা ও ড্রাগ লেভেল নির্ণয়। সে ব্যবস্থা এখানে নেই। ফলে বিএসএমএমইউ ও পরিচিত হাসপাতাল থেকে করে আনা হচ্ছে।

‘প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম যেমন: ওটি লাইট ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেট দরকার। সেগুলোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে পেয়ে যাব। ডায়ালাইসিসের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেন্ডরের সঙ্গে পিপিপির ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে। রোগীদের কাছ থেকে প্রতি ডায়ালাইসিস বাবদ ৫১০ টাকা হারে ৬ মাসের জন্য ২০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। বাকিটা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।’

চিকিৎসা করতে নিঃস্ব ৯০ ভাগ রোগী

জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কিডনি বিকল হয়ে পড়া একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। দিন দিন এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

দেশে পৌনে তিন কোটি মানুষ কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া দেশে মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ শিশু, যাদের মধ্যে ৬ দশমিক ৬ শতাংশের এই সমস্যা রয়েছে, কিন্তু কিডনি জটিলতা রয়েছে এমন ৭০ শতাংশই জানেন না তারা এই রোগে আক্রান্ত।

চিকিৎসাব্যয় বেশি হওয়ায় ৯০ শতাংশ রোগী এর বোঝা বহন করতে পারছে না। চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

বিশ্বে প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১ জন দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন। সময়মতো চিকিৎসা না নেয়ায় এটি আরও মারাত্মক হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, এমনটা চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে অকালে মারা যাবে।

প্রাণঘাতী হিসেবে দুই যুগ আগেও রোগটি ২৭তম অবস্থানে ছিল। বর্তমানে তা সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। ২০৪০ সালে মানুষের মৃত্যুর পঞ্চম কারণ হবে কিডনি রোগ।

এ বিভাগের আরো খবর