ইউক্রেনের সমুদ্রবন্দরে আটকে পড়া এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিক-ক্রু অবশেষে দেশে ফিরেছেন। বুধবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান তারা। এরপর এদের মধ্যে ১২ জন রাতে ফেরেন চট্টগ্রামে।
রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করা প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।
বিমানবন্দরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন স্বজনরা। কেউ কেউ প্রিয়জনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। কাঁদছিলেন কয়েকজন। তবে সবার মুখেই ছিল স্বস্তির ছাপ।
জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশবাসীর দোয়ায় ও প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপের জন্য আমরা দ্রুত দেশে ফিরতে পেরেছি। এ জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ আকাশ যাত্রা শেষে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সবাই। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
৫৫ বছর বয়সী মো. ওবায়দুল হক বিমানবন্দরে এসেছিলেন সন্তান মাসুম বিল্লাহকে নিয়ে যেতে। সন্তানকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছেলেকে কাছে পেয়ে যেন জীবন ফিরে পেয়েছি। রোমানিয়ায় আসার পর যোগাযোগ হলেও হামলার পর থেকে কোনো যোগাযোগ ছিল না আমার ছেলের সঙ্গে। আমরা দিনরাত পেরেশানিতে ছিলাম। আমার ছেলেও ভাবেনি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কখনও পড়বে। তবে ছেলেকে কাছে পেয়ে এখন ভালো লাগছে।’
স্বামী জামাল হোসেনকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শামীমা আক্তার। জামাল বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘দেশে জীবন নিয়ে ফিরব এটা প্রায় অনিশ্চিত ছিল। স্ত্রী-সন্তানকে দেখে সব দুঃসহ স্মৃতি ভুলে গেছি।’
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফেরা এই ১২ নাবিক-ক্রুর বাড়ি চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায়। তাদের নামের তালিকা তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
এমভি বাংলার সমৃদ্ধি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। জাহাজটির ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরু হলে আর ফিরতে পারেনি এটি।
বন্দরে ২৯ নাবিক নিয়ে আটকা পড়েছিল জাহাজটি। এর মধ্যে গত ২ মার্চ সন্ধ্যায় রকেট হামলায় নিহত হন থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ। পরদিন জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ নাবিক ও ক্রুকে সরিয়ে নেয়া হয় নিরাপদ স্থানে।
টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বুধবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে ওই ২৮ জন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।