বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২২ ২১:৩২

পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, আমদানির সঙ্গে রপ্তানিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তাই, আমদানি যেটা বাড়ছে, তা যদি ঠিকঠাকমতো বিনিয়োগে আসে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এই ঘাটতির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ( ১ হাজার কোটি) ছাড়িয়ে গেছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

এর আগে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়েও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক এত ঘাটতির মুখে পড়েনি।

আমদানির জোয়ারে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শুরুই হয়েছিল লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে। প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

ডিসেম্বর শেষে তা আরও বেড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সবশেষ জানুয়ারি শেষে ১০ দশমিক শূন্য বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমায় ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

তবে আর্থিক হিসাবে এখনও বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৮১৫ কোটি ৬০ লাখ (৮.৬০ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে ৪৪৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান আহসান মনসুর।

তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই সাত মাসে ৩৩০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ হিসাবে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।

তবে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ৩০ লাখ (২.০৫ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৬৪০ কোটি ৯০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায়

মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই আমদানিতে জোয়ার বইছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান বা বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায় উঠছে।

অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ৫০ লাখ (১৮.৭০ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

তথ্যে দেখা যায়, এই সাত মাসে ৪ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৪৬.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই সাত মাসে ৩ হাজার ১৯২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি (২৭.৯৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবেই অর্থবছরের সাত মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।

সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

রেমিট্যান্স কমেছে ২০ শতাংশ

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ (১১.৯৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম।

২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

অর্থনীতির এই সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, আমদানির সঙ্গে রপ্তানিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তাই, আমদানি যেটা বাড়ছে, তা যদি ঠিকঠাকমতো বিনিয়োগে আসে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’

‘আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে এই বছরেই যান চলাচল করবে। মেট্রোরেলও পুরোদমে চালু হবে। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজও শেষ হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। এসব বড় প্রকল্প বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।

‘আর এসব উন্নয়নযজ্ঞকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের ছক কষছেন উদ্যোক্তারা। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় পণ্য-সরঞ্জাম আমদানি করছেন তারা। তাতেই বাড়ছে আমদানি।’

এ বিভাগের আরো খবর