উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।
বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বিশ্বে লিঙ্গ সমতার জন্য পক্ষপাতিত্ব ভাঙতে হবে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা এ মত দেন।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক গবেষণা সংস্থা পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ওত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশের ৫০ বছরের অগ্রগতিতে নারীদের উদযাপন করার মতো অবদান আছে। নারীরা এগোচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এখন সময় হয়েছে নাগরিক হিসেবে সব পর্যায়ে সবাই সমান সুবিধা পাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার।’
অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ‘নারী পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো উন্নয়ন টেকসই হবে না। এ জন্য পরিবার থেকে সংসদ সব পর্যায়ে উদ্যোগ থাকতে হবে। রাষ্ট্রকেই সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
ব্যবসা-বাণিজ্য-কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগের জন্য রাষ্ট্রীয় নীতি চান সিপিডির বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সদস্য পারভীন মাহমুদ ।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘নারী পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে সে ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা মানসিকতা। এ ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের মানসিকতা নয়, নারীর মানসিকতায়ও সমস্যা রয়েছে। ’
জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গর্ব করার মতো। সামাজিক নানা খাতেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে নারীর অধিকার ও সুরক্ষা অর্থনৈতিক অগ্রগতির সমানতালে এগোয়নি। এজন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন দরকার।’
ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেন রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সানডারা বারসন লিন্ডে বলেন, ‘নারীদের ওপর নানা ধরনের অভিঘাত এখনও রয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারীরা সমস্যায় পড়ছেন। সমতা সৃষ্টির জন্য নারীবান্ধব রাষ্ট্রীয় নীতি দরকার।’
ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন পওলা সিনডেলার বলেন, ‘টেকসই অগ্রগতি, জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর ভূমিকা পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে নারীরা এগিয়ে আসার সুযোগ পাবেন।’
আকতার ইমাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ম্যানেজিং পার্টনার ব্যারিস্টার রাসনা ইমাম বলেন, ‘নারী পুরুষের বিভেদ দূর করতে উত্তারাধিকার অধিকারে সমতা আনতে হবে।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার লিমা বলেন, ‘শ্রমজীবী নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করে। কর্মক্ষেত্রে আইনেও নারী পুরুষের সমান অধিকার নেই। নারীরা শিক্ষিত হচ্ছে, আয় করছে এটাই শেষ নয়। বিভেদগুলো দূর করতে হবে। যে পক্ষপাতের কথা বলা হচ্ছে তা নারী-পুরুষ উভয়কে মিলে ভাঙতে হবে।’
হাইড্রোকো প্লাস বাংলাদেশের সহ প্রতিষ্ঠাতা রিজভানা হ্রিদিতা বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উদ্ভাবন দিয়ে সমাজে সাম্য নিশ্চিত করতে হবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সবক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা প্রয়োজন। নারী ও পুরুষের অধিকার ও সুযোগ সমান না হলে সমাজের উন্নয়ন টেকসই হবে না। ’
মুক্ত আলোচনায় এসিআই ফরমুলেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুস্মিতা আনিস, বেসিসের সাবেক সহ সভাপতি ফারহানা রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন ব্যবস্থার প্রধান সাহানা হুদা, মহিলা পরিষদের রেহানা বেগমসহ অনেকে বক্তব্য দেন।