সিলেটে প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে জ্বালানি তেলের সংকট। চলতি বোরো মৌসুমে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
দীর্ঘ সময়েও এ সংকটের সমাধান না হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছে সিলেট বিভাগীয় পেট্রলপাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
ছয় দফা দাবিতে বুধবার নগরে প্রায় ২০০ তেলবাহী ট্যাংকলরি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন সংগঠনের মালিক-শ্রমিকরা।
দুপুরে মিছিলটি নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশিদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ, গ্যাসের লোড বৃদ্ধি, সিএনজি পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করা, বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগার পুনরায় চালু করা ইত্যাদি।
জানা গেছে, হাওর প্রধান এ অঞ্চলে বোরো চাষের সময় এলে জমিতে সেচের জন্য ডিজেলের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু জ্বালানি তেলের অব্যাহত সংকটের কারণে এই বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
সিলেট বিভাগীয় পেট্রলপাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল হোসেন আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।’
এতেও সমস্যার সমাধান না হলে আরও কঠোর আন্দোলন ডাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সিলেট পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সিলেটে দৈনিক ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। তবে এখন তারা সপ্তাহেও ১০ লাখ লিটারের জোগান পাচ্ছেন না। ফলে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সংকটের কারণ হিসেবে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগার বন্ধ থাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল না আসায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের কয়েকটি রিফুয়েলিং স্টেশন জ্বালানিসংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানান, আগে সিলেটের গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত উপজাত দিয়ে স্থানীয় শোধনাগারগুলোর মাধ্যমে পেট্রল ও অকটেন উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হতো। কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিএসটিআইয়ের মান অনুসরণ করতে না পারার অজুহাতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সিলেটের ছয়টি শোধনাগার বন্ধ করে দেয়া হয়।
এই ছয়টি শোধনাগারের মধ্যে গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড-আরপিজিসিএলের দুটি প্ল্যান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাসটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্ল্যান্টে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫০ ও ৪ হাজার ব্যারেল পেট্রল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো।
মূলত সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর জ্বালানিসংকট প্রকট হয়েছে বলে জানান তারা।
এ নিয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করলে গত বছরের ১০ মার্চ সিলেটে আসেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি সংস্কারের মাধ্যমে সিলেটের সবকটি শোধনাগার চালুর আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত শুধু রশিদপুরের প্ল্যান্টটি চালু হয়। বাকিগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে।
পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একে তো সিলেটের প্ল্যান্টগুলো বন্ধ। তার ওপর রয়েছে রেলের ওয়াগনসংকট। তাই চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ পাই না আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখন সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে তিনটি তেলবাহী ওয়াগন আসে। এ তিন ওয়াগনে তেল আসে মাত্র ৯ লাখ লিটার।
‘চাহিদা পূরণে আমরা বাধ্য হয়ে নিজ খরচে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কপথে তেল নিয়ে আসি। এতে খরচ অনেক বেশি পড়ে। আর চাহিদাও পূরণ করা যায় না। তাই অনেকেই এখন পাম্প বন্ধ করে দিচ্ছেন।’
সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রলপাম্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় মোট ৭০টি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে গত দেড় বছরে জেলার অন্তত তিনটি পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটের জ্বালানিসংকট ও ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
তবে রাতারাতি এসব দাবি পূরণ সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংকট নিরসনে কিছুটা সময় লাগবে।’