‘আমার মীমেরে আমি কত কষ্ট কইরা খাওয়াইছি। আমার পাখিটারে আল্লায় কেমনে লইয়া গেল!’
সন্তান হারানোর বেদনায় বুধবার এসব বলেই আর্তনাদ করছিলেন ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত স্কুলশিশু মীমের মা রূপা আক্তার। তার আর্তনাদে ভারী হয়ে এসেছিল আশপাশের পরিবেশ।
কেঁদে কেঁদে রুপা বলছিলেন, ‘আমি কত কষ্ট করছি। আমার পাখিটারে আল্লায় কেন লইয়া গেল?’
মীমের নানি ওহিদা বেগম বলেন, ‘আমি নাতির পেছন পেছন গেছি। চোখের সামনে আমার নাতিনডা মইরা গেল।’
প্রতিবেশীরা জানান, মীমের বাবা মাসুম মিয়া মানসিক প্রতিবন্ধী। ছোট্ট একটি ঘর তাদের। নিজেদের জায়গা নেই বলে প্রতিবেশীর উঠানে রাখা হয়েছে মীমের লাশ।
মীম কোরআন পড়ত নিয়মিত। তার মিষ্টি তেলাওয়াত শুনতে প্রতিবেশীরাও ভিড় করত।
একই ঘটনায় নিহত অপর শিশু রিমা আক্তারের বাড়িতেও শোকের মাতম। তার বাবা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি বিজয়পুর বাজারে তরকারি বেচি। বাজার দিয়াই আমার মাইয়াডা স্কুলে যায়। আইজ আমার থাইক্কা ১০ টেহা লইয়া গেছিল। একটু পরে হুনি, আমার মাইয়াডা ট্রেনের তলে পইড়া মইরা গেছে! আমি যাইয়া দেহি মাইয়াডা পইড়া রইছে!’
‘কোলে লইয়া কত ডাকলাম। কোনো জুয়াব দেয় না আমার সোনা ময়না পাখিডা। আরে খোদা কেমনে অইল?’
রিমার বাবা রিপন ও মা রেনু আক্তারকে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন না আশপাশের মানুষ। কোনো সান্ত্বনাই যেন তাদের শান্ত করতে পারছে না।
রিপন ও রেনুর দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রিমা ছিল সবার ছোট। স্থানীয় বিজয়পুর স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।
নিহত তন্বীর স্বজনদের আহাজারি
নিহত অপর শিশু তন্বীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার মা রোজিনা আক্তারকেও সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন গ্রামের মানুষ। উন্মাদপ্রায় রোজিনা এ সময় বলছিলেন, ‘সহালে তন্বী কয় আম্মা আমি স্কুলে যাইতাম না। আমি কই কেরে যাইতি না। স্কুলে যা। আমারে তন্বী কয়, আম্মা আমি স্কুলে যায়াম যদি গরুর গোশত রান্ধো। আমি কই, তুই স্কুল থাইক্কা আয়। আমি গরুর গোশত রান্ধিম।
‘মাইয়া আমার গোসল কইরা কাপড় পইরা স্কুলে গেল। এট্টু পরে হুনি আমার তন্বী নাই। আমার তন্বী কই গেলো গো?’
তন্বীর খালা ঝর্না আক্তার জানান, ওমানে থাকা তন্বীর বাবা বুলু মিয়া ঘটনা শুনেই বেহুঁশ হয়ে যান। পরে সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, রোজিনা-বুলু দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তন্বী দ্বিতীয়।