বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জোড়াতালি দিয়ে স্থিতিশীলতা আসবে না: মির্জ্জা আজিজ

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২২ ১৭:৫৯

‘কমতে শুরু করলেই এটা-ওটা করে বাজারের পতন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হবে; আবার বাড়তে শুরু করলে নানা ধরনের কড়াকড়ি-নজরদারি করা হবে- এটা ঠিক না। …সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ কারণে মাঝেমধ্যেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পুঁজিবাজারে দৈনন্দিন হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।’

ইউক্রেন যুদ্ধের পর ধস থেকে দেশের পুঁজিবাজার আপাতত ইউটার্ন নিয়ে উত্থানে গেছে। ব্যাপক উত্থানে হারানো পুঁজি কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এই উত্থানের পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দুটি সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। ১. পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা জরুরি বিনিয়োগের নির্দেশ, ২. কোনো শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বাজারে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বিএসইসির এই হস্তক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়েছে। কিন্তু এভাবে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করা যাবে না।

নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বুধবার তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, জোড়াতালি দিয়ে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হয় না; স্থিতিশীলতা আসে না। বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কমতে শুরু করলেই এটা-ওটা করে বাজারের পতন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হবে; আবার বাড়তে শুরু করলে নানা ধরনের কড়াকড়ি-নজরদারি করা হবে, এটা ঠিক না। বাজারে উত্থান-পতন থাকবে- এটা মেনে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে হবে।’

২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে এক যুগেও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরেনি। ২০২০ সালের মে থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক চাঙাভাবে বিনিয়োগকারীরা বেশ লাভবান হলেও সাম্প্রতিক পতনে আবার আর্থিক খতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

সবশেষ দরপতন শুরু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, যেদিন ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালায় রাশিয়া।

এই যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের পুঁজিবাজারই প্রভাবিত হয়েছে। বাইরে ছিল না বাংলাদেশও।

এই যুদ্ধ শুরুর পর আট দিনে বাজারে সূচক পড়ে ৩৮২ পয়েন্ট। নবম দিনে এক ঘণ্টারও কম সময়ে আরও ১৩৭ পয়েন্ট সূচক পড়ার পর ব্যবস্থা নেয় বিএসইসি।

‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, জোড়াতালি দিয়ে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হয় না; স্থিতিশীলতা আসে না। বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে।’

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়ার খবরে সেদিন তলানি থেকে উঠে এসে দিন শেষ হয় ১৭ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। এই উত্থান এমন কোনো বড় কিছু না হলেও পরিস্থিতির কারণে সেটি বিনিয়োগকারীদের চিড় ধরানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

লেনদেন শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এসে ঘোষণা দেন, এক দিনে কোনো শেয়ারের দর ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা আগের মতোই থাকবে ১০ শতাংশ।

বুধবার লেনদেন শুরুই হয় ৫৭ পয়েন্ট যোগ হওয়ার মধ্য দিয়ে। দিন শেষে বাড়ে ১৫৫ পয়েন্ট।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘দুই দিন ধরে বাজার ফের বাড়ছে, বলা হচ্ছে বিএসইসি কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বাড়ছে। কিন্তু আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল, সব শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমে এসেছিল। এখন সবাই কম দামের শেয়ার কিনছে, তাই দাম বাড়ছে। বাজার ভালো হচ্ছে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম।’

‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব’

ইউক্রেন ইস্যু ছাড়াও দেশের পুঁজিবাজারে আরও কিছু সংকট রয়েছে। বিএসইসির সঙ্গে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে মতভিন্নতার বিষয়টি অনেকটাই রেষারেষির পর্যায়ে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, বাজারকে প্রভাবিত করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দুই পক্ষ সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবে, কিন্তু সেটি কখনও হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা সময় নানা সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়েছেন।

‘দুই দিন ধরে বাজার ফের বাড়ছে, বলা হচ্ছে বিএসইসি কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বাড়ছে। কিন্তু আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল, সব শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমে এসেছিল। এখন সবাই কম দামের শেয়ার কিনছে, তাই দাম বাড়ছে। বাজার ভালো হচ্ছে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম।’

মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, বাজারে যে সংকট, সেটি শনাক্ত করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত জরুরি।

তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ কারণে মাঝেমধ্যেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

‘পুঁজিবাজারে দৈনন্দিন হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তবে এটাও ঠিক যে আর্থিক বাজারে নানা রকম অনভিপ্রেত বা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে। যদি কোনো সময় বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করে তখন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার (এসইসি) হস্তক্ষেপ করা উচিত।’

তবে কোনো কারসাজি হলে কঠোরভাবে দমন করতে হবে- এটাও বলেন বিএসইসির সাবেক প্রধান। বলেন, ‘এই যে যুদ্ধের অজুহাতে কয়েক দিন বাজারে বড় পতন হলো, এতে কেউ বা কোনো মহল জড়িত ছিল কি না তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

‘হুজুগ থেকে বের হতে হবে’

আবার সম্প্রতি একটি বড় মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে করা জরিপে উঠে এসেছে, বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যেই পুঁজিবাজার নিয়ে সুষ্পষ্ট ধারণা নেই। তারা শেয়ার কেনেন গুজবে।

‘আমাদের বিনিয়োগকারীরা অযৌক্তিক আশঙ্কায় ভোগেন। এখানকার বিনিয়োগকারীদের হুজুগে মেতে ওঠার প্রবণতা খুব বেশি। ‘অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার আছে এখনও, যাদের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিনিয়োগযোগ্য। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে অহেতুক উল্টাপাল্টা শেয়ার কিনে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’

মির্জ্জা আজিজও মনে করেন, সাম্প্রতিক এই দরপতনের প্রধান কারণ ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে ৫০ বছরের এই বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পাইনি। কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই বাজার বাড়ে; আবার পতন হয়। এই যে গত কয়েক দিন টানা পতন হলো, তাতেও কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না।

‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও বাজারে পতন হলো। অযথাই একশ্রেণির বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন; আর সে কারণে বিক্রির চাপে বাজারে বড় পতন হয়েছে।’

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগকারীরা অযৌক্তিক আশঙ্কায় ভোগেন। এখানকার বিনিয়োগকারীদের হুজুগে মেতে ওঠার প্রবণতা খুব বেশি।

‘অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার আছে এখনও, যাদের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিনিয়োগযোগ্য। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে অহেতুক উল্টাপাল্টা শেয়ার কিনে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’

‘আমরা জানি যে আমাদের শেয়ারবাজারের বড় অংশজুড়েই রয়েছে ব্যাংক খাত। স্বাভাবিক কারণেই বাজারের সার্বিক সূচকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগ দিতে হবে।’

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে

ব্যাংক খাতের দুরবস্থাও পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ। তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃত হিসাবে এর পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি। ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি নিয়েও মানুষ সন্দিহান।

‘আমরা জানি যে আমাদের শেয়ারবাজারের বড় অংশজুড়েই রয়েছে ব্যাংক খাত। স্বাভাবিক কারণেই বাজারের সার্বিক সূচকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগ দিতে হবে।’

ঢালাও আইপিও নয়

পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার ওপরও জোর দেন মির্জ্জা আজিজ। বলেন, 'ঢালাওভাবে কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব তথা আইপিও দেয়া যাবে না। আইপিও অনুমোদনের সময় প্রতিবেদনে বাস্তব চিত্র না দেখিয়ে একটি রোজি পিকচার দেয়া হয়। যার ফলে লেনদেনের প্রথম দিকে দাম বাড়ে। আর কিছুদিন পর দাম কমে যায়।'

এ বিভাগের আরো খবর