অ্যাডহক নিয়োগ দেয়া, জ্যেষ্ঠতা ও চাকরি শুরুর তারিখ থেকে পেনশন বিবেচনাসহ ৯ দাবি জানিয়েছে সরকারি কলেজ স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতি (সকস্বাশিস)।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতি মোফাচ্ছের হোসাইন জীবন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি করা কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রায় ৭ বছর ধরে ঝুলে আছে সরকারীকরণের কাজ। তিনবার বিভিন্ন জায়গায় যাচাই-বাছাই হয়েছে কাগজপত্র। মানসিকভাবে শিক্ষকরা এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত। তিন শতাধিক কলেজের মধ্যে ৭ বছরে মাত্র একটি কলেজের অ্যাডহক নিয়োগ হয়েছে। বাকি কলেজগুলোর শিক্ষকদের দ্রুত অ্যাডহক নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারলে শিক্ষায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের আত্তীকরণ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সরকারি বেতনে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কলেজগুলোতে সরকারি সাইনবোর্ড লেখা দেখে ভর্তি হয়ে বেসরকারি নিয়মে বেতন ও ফি দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়ছে। এরই মধ্যে আমাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই অবসরে গেছেন।
ইংরেজি, আইসিটিসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক পদ খালি থাকায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকদের নিয়োগ শেষ না হওয়ায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। এতে দেশব্যাপী সরকারি করা কলেজগুলোতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
পরে সংগঠনটি ৯টি দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো-
১. বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীকে এই অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অ্যাডহক নিয়োগ দেয়া।
২. শিক্ষক-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা এবং পেনশনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তারিখ থেকে চাকরির পুরো সময় গণনা করা।
৩. চাকরির ৮ বছর পূর্তিতে নবম গ্রেড থেকে টাইমস্কেল পেয়ে যারা সপ্তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তাদের ‘সরকারীকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৯ ধারা মোতাবেক সপ্তম গ্রেডেই নিয়োগ দিতে হবে।
৪. যেসব কলেজের নিয়োগ শেষ হয়েছে সেসব কলেজের শিক্ষকদের ‘সরকারীকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৮ ধারা মোতাবেক ক্যাডারভুক্তির জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১’ এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সাধারণ শিক্ষা) কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার বিধিমালা ১৯৮০’ অনুসারে পরে চাকরি স্থায়ী, পদোন্নতিসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
৫. প্রতিষ্ঠান জিও জারির সময়ে যাদের বয়স ৫৯ বছরের মধ্যে ছিল তাদের সরকারি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
৬. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যেসব কলেজের শিক্ষকদের ব্যাপারে মতামত চাওয়া হচ্ছে সেসব শিক্ষকের ফাইলের ওপর চাওয়া মতামত সর্বোচ্চ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করা এবং অযাচিত মতামত চাওয়া বন্ধ করা। আংশিক আটকে থাকা শিক্ষকদের ফাইলের কারণে পুরো কলেজের শিক্ষকদের ফাইল আটকে রাখা যাবে না।
৭. বর্তমান জাতীয় পে-স্কেল অনুসারে টাইম স্কেল/সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে ১০ বছর চাকরিকাল অতিক্রান্তের পর পরের গ্রেডে পদোন্নতির বিধান অনুযায়ী সরকারি করা কলেজের শিক্ষকদের পদোন্নতি দিতে হবে।
৮. যারা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ইনডেক্স নিয়ে যোগদান করেছেন, তাদের পূর্বের প্রতিষ্ঠানের চাকরির সময় ধরতে হবে।
৯. এনটিআরসিএ-র নিয়ম অনুযায়ী যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সিলেক্ট হয়েছেন, তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ করতে হবে।
সরকারি কলেজ স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কিষান মোস্তফার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি অজিত কুমার বিশ্বাস, কমল কান্তি রায়, উল্লাসীনি সরকার, এ টি এম আজরফ প্রমুখ।