দল বেঁধে হাঁসরা ছোটাছুটি করছে পুকুরে। কখনও আবার খাবারের জন্য কিচিরমিচির করছে সেগুলো। নীলফামারীর জলঢাকা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বিন্যাকুড়ি গ্রামের হাঁসচাষি রবিউল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
রবিউল ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন গৃহপালিত পশু পালনের। এর মাধ্যমে নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থান করবেন। সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি।
অনেক কাঁঠখড় পুড়িয়ে বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন হাঁসের ছোট খামার। ৫০টি হাঁসের ছানা দিয়ে শুরু করেন স্বপ্নের খামার, নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নসিঁড়ি’।
এ কাজ করে দুই বছর ধরে স্বাবলম্বী তিনি। ৪৪ বছরের রবিউল নিজের খামার দেখভালের পাশাপাশি জলঢাকা শহরে একটি মুদি দোকানে কাজ করেন।
উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হাঁসের খামারে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা খরচ করেছি। বাড়ির উঠানে পুকুর কেটে হাঁসগুলোর ভালোভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিয়েছি। খামারের সব কাজ নিজেই করি। খামার পরিচর্যায় সহায়তা করেন স্ত্রী ফেন্সি বেগম।’
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হাঁসগুলোকে প্রতিদিন দুই তিন বেলা খাবার দিতে হয়। প্রতিদিন ১ হাজার টাকার খাবার লাগে।’
স্বপ্নসিঁড়ির উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম। ছবি:নিউজবাংলা
‘ধান, গম, কুড়া, ফিট, খৈল, ছোলার ভুষি, খেসারির ভাঙ্গা ভুষি ও ঝিনুকের চুন খাওয়ানো হয়। প্রথমে ৫০টি হাঁসের ছানা দিয়ে শুরু করা হলেও বর্তমানে খামারে রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ হাঁস।’
রবিউল জানান, পরিচর্যা না করলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় হাঁসগুলো। সপ্তাহ আগে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০০টি হাঁস মারা গেছে। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন খামার থেকে ১৯২টি ডিম পাচ্ছি। ডিমের হালি প্রতি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি করি। দিনে প্রায় ২৫০০ টাকার ডিম বিক্রি করতে পাচ্ছি যা দিয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে হাঁসের পরিচর্যার কাজে ব্যয় করতে পারছি।’
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ ও পশু হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে ছোট এ খামারকে বড় করার আশা করেন রবিউল।বলেন, ‘হাঁসগুলো আমার সন্তান, এরাই আমার ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্নসিঁড়ি।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ‘রবিউল ইসলামের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য সব সময় প্রস্তুত আমরা। কারিগরি সহযোগিতাসহ হাঁসের টিকা দেয়ার পরামর্শ ও ফ্রি টিকা সরবরাহ করি আমরা। এছাড়া হাঁস খামারিদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনাসহ কারিগরি প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা আছে আমাদের।’