হালুয়াঘাটের একটি মদের দোকানের সাইনবোর্ডের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই সাইনবোর্ডের মাঝখানে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার পাওয়া ছবিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন অনেকে। প্রকৃত ঘটনা যাচাই করেছে নিউজবাংলা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নালিতাবাড়ি রোড এলাকায় একটি মদের দোকান আছে। এটি সরকার অনুমোদিত একটি দেশীয় মদের দোকান। সেখানে একটি সাইনবোর্ড আছে, যা প্রচার পাওয়া ছবির মতোই । তবে সেখানে নেই কোনো ছবি। সমালোচনার মুখে স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার দুপুরে সাইনবোর্ডটি সরিয়ে থানায় নিয়ে রেখেছে।
ফেসবুকে প্রচার পায় এমন অনেক স্ট্যাটাস। ছবি: নিউজবাংলা
ফেসবুকে প্রচার পাওয়া সাইনবোর্ডের মাঝামাঝি জায়গায় ফটোশপের মাধ্যমে বসানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। সাইনবোর্ডের উপরের দিকে বামপাশে আওয়ামী লীগের লোগো। ডানদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ছবি বসানো হয়েছে, যা অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ উদ্দেশ্যে কেউ প্রধানমন্ত্রীর ছবি সাইনবোর্ডের মাঝখানে বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ফেক ছবিটি কোন উৎস থেকে প্রথম ছড়ানো হয়েছে তা এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি।
সোমবার রাত ২টা ১২ মিনিটে একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধি একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ছবিটি পোস্ট করেন। সেখানে নানা মন্তব্য করেন ঐ গ্রুপের সদস্যরা। এরপর আরও গ্রুপ ও অনেকের ফেসবুক ওয়ালে ছবিটি দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই সাংবাদিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছবিটি একজনের ফেসবুক ওয়ালে পেয়েছি। তা ফান করে নিজেদের গ্রুপে দিয়েছিলাম। পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’
সুমন আহম্মেদ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করে লেখেন, হালুয়াঘাটের ঐতিহ্য এখন দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। মদ যদি অবৈধ ও হারাম পানীয় হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ব্যানার দিয়ে কীভাবে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করে?
তার এই লেখাতে অনেকে মন্তব্য করেন।
কাজী জহির নামে একজন ছবিটি দিয়ে লিখেছেন, জাস্ট ছি: ছি:।
ফেসবুকে প্রচার পায় সাইনবোর্ডের আসল ছবিটিও। ছবি: নিউজবাংলা
মোহাম্মদ মাসুদ করিম শান্ত নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রকৃত সাইনবোর্ডের একটি ছবি পোস্ট করে অনেককে শেয়ার করেন। তিনি মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে নিজে ছবিটি তুলেছেন বলে দাবি করেন।
মদের দোকানের আলোচিত সাইনবোর্ডে সরকারি দেশি মদের দোকান কথাটি বড় করে লেখা। সেটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কারও ছবি এ সাইনবোর্ডে নেই।
মদের দোকানের সাইনবোর্ডটি এখন থানায়। ছবি: নিউজবাংলা
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে সাইনবোর্ডটি আমাদের নজরে আসে। হালুয়াঘাটের নির্ধারিত স্থানে সাইনবোর্ডটি থাকলেও তাতে কারও ছবি নেই। কেউ ইচ্ছে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেক ছবি ছড়িয়ে দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
‘মদের দোকানটির লাইসেন্স আছে। সড়কের পাশে মদের দোকানটির সাইনবোর্ড সবার নজরে পড়ে। এতে সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বিবেচনায় সাইনবোর্ডটি নামিয়ে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুজ্জামান খান বলেন, ‘যে বা যারা প্রধানমন্ত্রীর ছবি এডিট করে সাইনবোর্ডে বসিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’