বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তামান্না গবেষক হতে চান

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২২ ২১:১১

হাসপাতালে সাংবাদিকদের তামান্না বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমার সে স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে না। আমার ইনস্পিরেশন হলেন স্যার স্টিফেন হকিং। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তিনি জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। আমারও ইচ্ছা গবেষণা করার, সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ার।’

প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বড় বাধা নয় তার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তামান্না আক্তার নুরা। যশোরের এই অদম্য মেধাবীর জন্মগতভাবে দুটি হাত ও একটি পা নেই। চলাচলও করতে পারেন না কারো সহযোগিতা ছাড়া।

এক পায়ে কলম ধরে শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই প্রতিটি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তামান্না। সবশেষ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিবাদন কুড়িয়েছেন। সরকারপ্রধানের উদ্যোগেই এবার শুরু হয়েছে তার চিকিৎসা, যেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেন এই মেধাবী।

মঙ্গলবার যশোর থেকে ঢাকায় এসে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন তামান্না। হাসপাতাল বেড বসেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন নিজের স্বপ্নের কথা।

তামান্না বলেন, ‘খুবই ভাল লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি- তারা আমাকে নিয়ে এতটা ভেবেছেন। এখন আমার সারাক্ষণের কল্পনা- আমি হাঁটব, হাঁটলে আমাকে কেমন লাগবে, আমি সাধারণদের মতোই হাঁটব নাকি অন্যরকম লাগবে আমাকে!

‘আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আর এই দিনে আমি হাঁটার স্বপ্ন দেখছি। এটাও অনেক বড় পাওয়া। আজকের পর্যায়ে আসতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নানা বাধা পাড়ি দিতে হয়েছে। অনেক নারী এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন। পাহাড়সম বাধা মোকাবেলা করে এই পর্যায়ে আসাটাও আমার কাছে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার মতো।’

তামান্না বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমার সে স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে না। আমার ইনস্পিরেশন হলেন স্যার স্টিফেন হকিং। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তিনি জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। আমারও ইচ্ছা গবেষণা করার, সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ার।’

কথা বলার এই সময়ে তামান্না উপস্থিত সবাইকে পায়ে কলম ধরে লিখে দেখান। তিনি লেখেন-‘মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর, নিজেরে কর জয়।’

তামান্নার বাবা রওশন আলী মনে করেন, প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের সহানুভূতির অভাব রয়েছে। তিনিও শোনালেন, তামান্নাকে নিয়ে তাদের যুদ্ধের কথা।

রওশন আলী বলেন, ‘ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আমার পরিবার ও সমাজের কেউ তামান্নাকে দেখতে আসেনি। বরং পরিবার ও সমাজের সবাই আমাকে চাপ দিয়েছে স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে। কারণ সে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দিয়েছে। এই চাপে আমি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাই। হাত-পা বিহীন তামান্নাকে আমরা মাটিতে বসিয়ে রাখতাম। সে বসে বসে খেলত।

একদিন মেয়ের মা খেয়াল করে যে পায়ের আঙ্গুল দিয়ে একটি কাঠি ধরে সে মাটিতে দাগ কাটছে। এটা দেখার পর আমরা তার পায়ে পেন্সিল ধরিয়ে অক্ষর লেখা শেখালাম। স্কুলে ভর্তি করার পর তামান্না বেঞ্চে বসতে পারত না। তাই ওকে মাটিতে বসিয়ে ক্লাস করানো হত। মাধ্যমিক পর্যায়ে তামান্নার স্কুলে মেয়েদের ক্লাস হতো দোতলায় আর নীচতলায় হতো ছেলেদের ক্লাস। তামান্নাকে উপরে উঠানো-নামানো কষ্টকর হতো। সেজন্য নিচতলায় ছেলেদের ক্লাসেই পড়ত সে।’

তামান্নার বাবা আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের স্বপ্ন মেয়েকে হাঁটতে দেখব। আমি এই আনন্দ প্রকাশ করতে পারছি না। মনে হচ্ছে জীবনে অনেক খরার পর এক পশলা বৃষ্টির দেখা পেয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর