রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের দেয়া কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে শিশুদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ছয় দফা দাবি তুলেছেন তেঁতুলতলা মাঠরক্ষা আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মাঠ রক্ষায় এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কলাবাগানের বাসিন্দাসহ তেঁতুলতলা মাঠে খেলাধুলা করা শিশুরাও ছিল। শিশুদের একজন অভিযোগ করে বলে, এই মাঠে তিন মাস ধরে তাদের কাউকে ঢুকতে ও খেলতে দিচ্ছে না পুলিশ।
অর্ধশতক ধরে কলাবাগানের বাসিন্দারা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে এই মাঠকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে জানিয়ে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্মা বলেন, ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ মাঠে খেলাধুলা করে আসছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে এ মাঠে থানা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও রাখা হয়। কলাবাগান থানা ২৮ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই উন্মুক্ত স্থান কার কাছ থেকে ক্রয় করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রীকে একমাত্র ভরসার জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করবো প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের জন্য মাঠটি উন্মুক্ত করে দিবেন।’
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় দাবি জানানো হয়। ছবি: নিউজবাংলা
সম্মেলন থেকে উত্থাপন করা ৬ দফা দাবিগুলো হল- কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে, পুলিশের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে অবিলম্বে মাঠটিকে মুক্ত করতে হবে। পুলিশের ছাউনি এখান থেকে সরাতে হবে।
শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ ঘোষণা দিয়ে সেই লক্ষ্যে পাকাপোক্তভাবে কলাবাগানবাসীকে দিয়ে দিতে হবে। খেলার মাঠ ও পার্কগুলো রক্ষার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসীদের নিয়ে কার্যকর নাগরিক কমিটি গঠন করতে হবে। এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা অনুযায়ী পার্ক ও মাঠ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বর্তমান লোকসংখ্যা অনুযায়ী খেলার মাঠ ও পার্কের অবস্থা পুনবিবেচনা করা। এছাড়া তেঁতুলতলা মাঠটিকে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর অধীনে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, পরিষ্কার ভাষায় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কাছে কিছু আবেদন জানাতে চাই।
জলাধার আইনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাঠগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই আইনকে কাজে লাগিয়ে শুধু ঢাকা নয় বিভিন্ন জায়গায় মাঠ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হোক। তারই ধারাবাহিকতায় শিশু-কিশোরদের জন্য ৫৪টি মাঠ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় এই আইন-শৃঙখলা বাহিনীকে শিশু-কিশোরদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। ৫০ বছর ধরে ব্যবহার হওয়া একটা খেলার মাঠ হাতছাড়া হতে পারে না।’
‘পুলিশকে মানবিক হতে হবে বলে আসছেন আইজিপি। সেই মানবিক পুলিশ তার শিশু সন্তানদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। পরিষ্কার ভাষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
তেঁতুলতলা মাঠ উদ্ধার করে শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান এই স্থপতি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরে এই জায়গা ফিরিয়ে দেবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। এই প্রত্যাশাগুলো বাড়তি দাবি না অধিকার বলে যোগ করেন এই বিশিষ্ট অধিকারকর্মী।
কলাবাগানের মাঠে খেলতে আসা ধানমন্ডি ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনির ছাত্র আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মাঠে তিন মাস ধরে খেলতে পারছি না। তারা জেল বানাবে এ জন্য আমাদের মাঠ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে রাখে। ঢুকতে গেলে মারে, গালি দেয়। গত পরশু দিন আমরা খেলার জন্য ঢুকতে চাইছিলাম আমাদের গালি দেয়, বকে। আবার হুমকি দেয় সবাইকে ধইরা নিয়া যাইবো জেলে।’