বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চা বাগানের বৃষ্টির স্বপ্নজয়

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২২ ১৩:৪৯

বৃষ্টি বুনার্জী বলেন, ‘আমি চা শ্রমিকের সন্তান। বর্তমান সময়ে এসেও চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। তাই পড়াশোনার প্রতিটি ধাপেই অর্থনৈতিক বাধা লেগেই থাকত। কিন্তু কষ্ট হলেও বাবা সব সময় আমার প্রয়োজনগুলো পূরণ করেছেন।’

সিলেট চা বাগানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বৃষ্টি বুনার্জীর। বাবা অস্থায়ী চা শ্রমিক, মা গৃহিণী। দারিদ্র্য ও সংগ্রামের সঙ্গেই বেড়ে ওঠা বৃষ্টির, তবে থেমে থাকেনি পথচলা।

লেখাপড়ায় মনোযোগী বৃষ্টি নিজ চেষ্টায় সব পাবলিক পরীক্ষায়ই রেখেছেন সাফল্যের স্মারক। চা বাগানের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিটিআরআই) চা বাগানের শ্রমিক কলোনিতে বড় হয়েছেন বৃষ্টি। পড়াশোনা বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় ও শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ থেকে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ। এ বছর ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে।

নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় বৃষ্টি বুনার্জীর। জানান নিজের স্বপ্নের কথা। বলেন, কাজ করতে চান চা বাগান ও চা বাগানের জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য।

পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তার ছোটবেলা থেকেই, তাই ভালো ফলাফলের জন্য সব সময় ছিলেন মনোযোগী। প্রাইভেট বা কোচিং ছাড়াই লেখাপড়া করেছেন নিজে নিজে। অসুবিধা হলে বড় ভাইয়ের সহযোগিতা নিতেন।

বৃষ্টি বলেন, ‘সব সময় চাইতাম পড়াশোনায় যেন ঘাটতি না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে। অসুবিধা তো থাকবেই, সেগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

‘পরিবার থেকে সব সময় সাপোর্টের কারণে আজ এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। কোনো অসুবিধা হলে বড় ভাই (কাজিন) সহযোগিতা করতেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সবাই যখন প্রাইভেট কোচিং করতেন তখন বৃষ্টি নিজ চেষ্টায়ই চান্স পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগের সামনে বৃষ্টি বুনার্জী। ছবি: সংগৃহীত

বৃষ্টি বলেন, ‘কলেজে থাকতে কয়েক মাস কোচিং করেছিলাম, তবে ভর্তি প্রস্তুতির জন্য কোচিং করতে পারিনি। টেক্সট বইগুলো ভালো করে পড়তাম আর বড় ভাইয়ের নির্দেশনায় প্রস্তুতি বই পড়েছি। নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করতাম।’

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু তা পূরণ হয়নি। পছন্দের বিষয় জীববিজ্ঞান ও রসায়ন, ভর্তিও হয়েছেন ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে। এতদূর আসতে কী কী বাধা পেরুতে হয়েছে- এ প্রসঙ্গে তিনি জানান জীবনের নির্মম বাস্তবতার কথা।

তিনি বলেন, ‘আমি চা শ্রমিকের সন্তান। বর্তমান সময়ে এসেও চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। তাই পড়াশোনার প্রতিটি ধাপেই অর্থনৈতিক বাধা লেগেই থাকত। কিন্তু কষ্ট হলেও বাবা সব সময় আমার প্রয়োজনগুলো পূরণ করেছেন।

‘চা বাগানের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমার চেষ্টা থাকবে খুব শিগগির যেন চা বাগানের আরও অনেক ছোট ভাই-বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।’

চবিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লেও সেটা কাটিয়ে উঠেছেন। পরিবার ঋণ করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। তবে তার দুশ্চিন্তা চট্টগ্রামে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কী করতে চান- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চা বাগান এবং চা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই।’

নারী দিবস নিয়ে তার ভাবনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। আজ নারীরা পিছিয়ে নেই, এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের তাদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হতে হয়, শুধু নারী হওয়ার কারণে। এই বৈষম্য দূর হোক, প্রত্যেক নারী যেন তাদের প্রাপ্য সম্মান পায়- এটাই প্রত্যাশা।’

এ বিভাগের আরো খবর