দেশের বিশিষ্ট নাগরিকের (বুদ্ধিজীবী) সঙ্গে মতবিনিময়ে বসতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপের প্রথম প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।
আগামী ১৩ মার্চ সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
অন্তত ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে এ মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের পরামর্শ নিতেই কমিশনের এই উদ্যোগ।
এই মতবিনিময় সভা শেষে পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়েও সংলাপ হবে।
সামনে রমজান মাস চলে আসায় এর আগেই যতটা সংলাপ শেষ করা যায় সেই চেষ্টা রয়েছে বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নব গঠিত কমিশন রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেন। ২০০৮ সালে ইসির নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা এটিএম শামছুল হুদা কমিশন মেয়াদকালে দু’বার সংলাপে বসেছিলেন।
এ ছাড়া দশম সংসদ নির্বাচন আয়োজনকারী কাজী রকিবুদ্দীন আহমেদ কমিনের সময়ও সংলাপ হয়েছিল। সদ্য বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন ও সংলাপ করেছিলেন নির্বাচনী অংশীজনদের নিয়ে। তবে নবনিযুক্ত হাবিবুল আউয়াল কমিশনের মতো দায়িত্ব নেয়ার প্রথম মাসেই সংলাপে বসেনি কোনো কমিশন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ বেগম রাশেদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন ভবনে অফিস শুরু করে হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ওই দিন বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নতুন কমিশন।
সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ১৩ মার্চ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভা হবে।’
কী বিষয়ে আলোচনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত তাদের বিভিন্ন পরামর্শ উঠে আসবে।’
কতজন বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সংলাপে বসা হবে জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আমরা ৫০ জনকে টার্গেট করেছি। সম্ভাব্য যতজনকে পাওয়া যায়। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নয়, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসার পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সামনে রোজা চলে আসছে৷ এর আগে খুব বেশি করা যাবে না। তারপর সবার সঙ্গে বসা হবে।’
সদ্য বিদায়ী কেএম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে ওই কমিশন ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথম সংলাপ শুরু করেছিল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ২৪ অক্টোবর সংলাপের মাধ্যমে এই পর্ব শেষ করে বিদায়ী কমিশন। ওই সংলাপে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষণ সংস্থা, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করা হয়।
সংলাপ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পাঁচ শতাধিক সুপারিশ আসে। সেখানে পাওয়া সুপারিশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে কমিশন। সেগুলো হলো- সংবিধান সংশ্লিষ্ট, আইন প্রণয়ন বিষয়ক ও নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।
সেই সংলাপে কিছুটা আশ্বস্ত হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পর বিএনপিসহ সমমনা বেশকিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কেএম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে অনাস্থা পোষণ করে বিভিন্ন নির্বাচন বর্জন করে।
দায়িত্ব নেয়ার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘পলিটিক্যাল লিডারশিপে যদি নূন্যতম সমঝোতা না থাকে, আমি তো তাদের মুরব্বী হতে পারব না। উনারা আমাদের থেকে অনেক বেশি জ্ঞানী, অভিজ্ঞ। আমরা তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করব আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেন। একটা চুক্তিবদ্ধ হন যে, আপনারা সুন্দরভাবে নির্বাচনটা করবেন। ওখানে সহিংসতা হবে না, কেউ কাউকে বাধা দেবে না।’
বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করব। বিএনপি যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে, তাদের কি আহ্বান জানাতে পারব না? কোনো কিছুই শেষ নয়। আমরা তো তাদের চা খেতে আমন্ত্রণ জানাতেই পারি।’
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করার পাশাপাশি সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেনি বিএনপি। বরং তাদের নেতারা একাধিকবার বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে দলটি আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে।’