বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বান্দরবানে ১০ দিনে ১২ খুন

  •    
  • ৭ মার্চ, ২০২২ ২১:৩৪

শান্তিচুক্তির পরও এ জেলায় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ছিল না। সারা বছর পর্যটকমুখর এ জেলায় সম্প্রতি ও শান্তির সুবাতাস বইলেও হঠাৎ করেই যেন তাতে ছন্দপতন। গত ১০ দিনে এ জেলায় ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারানো সবাই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য।

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে অপেক্ষাকৃত শান্তির জনপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বান্দরবান জেলাকে। বছরজুড়ে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত লেগে থাকলেও বান্দরবান ছিল তার বিপরীত।

শান্তিচুক্তির পরও এ জেলায় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ছিল না। সারা বছর পর্যটকমুখর এ জেলায় সম্প্রতি ও শান্তির সুবাতাস বইলেও হঠাৎ করেই যেন তাতে ছন্দপতন। গত ১০ দিনে এ জেলায় ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারানো সবাই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য।

এসব ঘটনায় বান্দরবানজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হুমকির মুখে পড়েছে জননিরাপত্তা। এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ ও সরাসরি মন্তব্য করতেও নারাজ সংশ্লিষ্টরা। তবে পুলিশ বলছে, সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত সীমাবদ্ধ। এসবের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যুক্ত নয়। তাদের প্রত্যক্ষ হুমকি ও হামলাও করছে না। যদিও জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলছে এসব ঘটনা।

সর্বশেষ শনিবার বিকেলে রোয়াঙ্গছড়িতে জনসংহতি সমিতি-সন্তু লারমা (জেএসএস ) ও মগ লিবারেশন পার্টির সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। এক দিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে ওই দিন (শনিবার) দুপুরে হত্যার শিকার জেএসএস কমান্ডার উনুমং মার্মার মরদেহ এখনও পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে অপহরণ করে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের না হলেও আমাদের জন্য উদ্বেগের। আধিপত্যের জেরেই জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে সংঘর্ষ। দুর্গম এলাকায় তাদের অবস্থান। ফলে ঘটনার পর আমরা খবরগুলো পাই। আমাদের লোকবল মাত্র ২ হাজার ৫০০। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। এর পরও আমরা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রোয়াংছড়ির নোয়াপতং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আলেচুপাড়ার পাহাড়ি ঝিরি থেকে এক নারীর গলা কাটা দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে শ্যামল তঞ্চঙ্গ্যা নামে একজনকে আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন শ্যামল। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ওই নারীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর ধর্ষণ করেছেন তিনি।

২৬ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকায় মংসিং শৈ মারমা নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, মংসিং শৈ মারমা গোসল করার জন্য বাড়ির পাশের টিউবওয়েলে গেলে সাত-আটজন অস্ত্রধারী তাকে ব্রাশফায়ার করে। মংসিং জেএসএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ ঘটনার দুদিন আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুমার গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের আবুপাড়ায় পাড়াপ্রধান লক্কুই ম্রো এবং তার চার ছেলে নুক্কুই ম্রো, লেং নি ম্রো, মেনু ওয়াই ম্রো ও রিং রাও ম্রোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জুমচাষের জমি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে পাড়াপ্রধান লক্কুই ম্রোর বিরোধের জেরেই ওই হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশ জানিয়েছিল।

বান্দরবান এমন সংঘাতময় ছিল না। বান্দরবান এখন অনেক উত্তপ্ত। এটি নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত। প্রশাসন কিছু না করলে আমরা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হবে না। মানুষ এখন নীরবে কাঁদে। আমি অন্য সময় মাঠে নেমে প্রতিবাদ করি। কিন্তু এবার মাঠে নামছি না, কারণ আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি

এ ছাড়া গত মাসের শুরুতে বান্দরবানে সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের সদস্যদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএসের সদস্যদের গোলাগুলির ঘটনায় এক সেনাসদস্যসহ মোট চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।

শান্তির জনপদ হঠাৎ কেন অশান্ত- এসব নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার জেরিন আখতারের। তিনি বলেন, ‘বান্দরবানের পরিস্থিতি একেক সময় একেক রকম হয়। পাহাড়ে গ্রুপগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। জনসাধারণের সঙ্গে তাদের কোনো সংঘর্ষ ও হুমকির ঘটনা কিন্তু ঘটছে না। তাদের নিজেদের নিজেদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে।

‘এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের না হলেও আমাদের জন্য উদ্বেগের। আধিপত্যের জেরেই জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে সংঘর্ষ। দুর্গম এলাকায় তাদের অবস্থান। ফলে ঘটনার পর আমরা খবরগুলো পাই। আমাদের লোকবল মাত্র ২ হাজার ৫০০। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। এর পরও আমরা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।’

জেলার প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করছেন স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন নয়। তবে এটি মানতে রাজি নন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বান্দরবান জেলার সভাপতি ডনাই প্রু নেলী।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বান্দরবান এমন সংঘাতময় ছিল না। বান্দরবান এখন অনেক উত্তপ্ত। এটি নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত। প্রশাসন কিছু না করলে আমরা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হবে না। মানুষ এখন নীরবে কাঁদে। আমি অন্য সময় মাঠে নেমে প্রতিবাদ করি। কিন্তু এবার মাঠে নামছি না, কারণ আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

বান্দরবানে দীর্ঘদিন পর্যটন খাত নিয়ে কাজ করছেন অপু নজরুল। তিনি জানান, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হবে। যার প্রভাব পড়বে জেলার পর্যটনশিল্পে। তিনি বলেন, ‘বান্দরবান অন্য দুই পার্বত্য জেলা থেকে অনেক শান্ত। তবে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতের কারণে বান্দরবান ঘুরতে আসা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা কাজ করবে।’

রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি-জেএসএসের পাশাপাশি সংস্কারপন্থি জেএসএস এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সক্রিয় রয়েছে। ইউপিডিএফ ভেঙে গড়া গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সংগঠনের কমবেশি তৎপরতা থাকলেও বান্দরবানে এখনও আধিপত্য বিস্তার করে আছে মূলধারার জেএসএস। এ ছাড়া রয়েছে জেএসএস-সংস্কারপন্থি ও মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)। তিন বছর আগেও বান্দরবান ছিল সংঘাতমুক্ত এলাকা। মগ পার্টির উত্থানের পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। শুরু হয় সংঘাত, হানাহানি। এই মগ পার্টি মূলত মিয়ানমারের আরাকান লিবারেল পার্টি (এএলপি) দলছুট কয়েকজন নেতাকে নিয়ে গঠিত হয়েছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও সদরের আংশিক এলাকাজুড়ে রয়েছে এদের শক্তিশালী অবস্থান।

এ বিভাগের আরো খবর