ঝিনাইদহে অপহৃত কলেজছাত্রীকে মানিকগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
কলেজছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৪ ও র্যাব-৬ সোমবার ভোরে যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানের একপর্যায়ে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা থেকে অপহরণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আবু জার গিফারী গাফফার এবং তার দুই সহযোগী সাব্বির হোসেন ও হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ভুক্তভোগী তরুণীকেও। এ সময় এক কৌটা অ্যাসিড, তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও মোবাইল ফোন জব্দ করে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আবু জার গিফারী গাফফার অপহরণের কথা স্বীকার করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, আইন পেশা ও স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় আবু জার গিফারী গাফফার ঝিনাইদহের শৈলকুপার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ওই কলেজছাত্রীকে পছন্দ করতেন ও তার পরিবারের কাছে নানা সময়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তাতে সাড়া না পেয়ে ওই তরুণীকে অপহরণ করে বিয়ের পরিকল্পনা করেন তিনি।
গাফফারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উল্লেখ করে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গত ৩ মার্চ ঝিনাইদহ কোর্টসংলগ্ন এলাকায় গাফফার তার কয়েক বন্ধুর সঙ্গে বসে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে সেটির নম্বর প্লেট খুলে রাখেন। উদ্দেশ্য কেউ যেন গাড়িটি শনাক্ত করতে না পারে।
গত ৫ মার্চ বিকেলে ওই কলেজছাত্রী প্রাইভেট পড়ে এক সহপাঠীর সঙ্গে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় গাফফার ও তার দুই সহযোগী শৈলকুপার একটি রাস্তা থেকে তাকে জবরদস্তি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। স্থানীয়রা এ ঘটনা দেখলেও গাফফার প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
অপহরণের পর ওই তরুণীকে মাইক্রোবাসে প্রথমে রাজবাড়ীতে এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যান গাফফার। সেখানে ওই কলেজছাত্রীর কান্নাকাটিতে আশপাশের বাসিন্দারা ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে সাব্বির ও হাফিজুর নামে দুই বন্ধুর সহায়তায় রেন্ট-এ কার থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে ওই তরুণীকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন গাফফার। পথে কলেজছাত্রী কান্নাকাটি করলে অ্যাসিডে ঝলসে দেয়া ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
এদিকে ঢাকায় আরেক আত্মীয়ের বাসায় উঠতে চাইলে সেখানেও আশ্রয় না পেয়ে তারা আরেকটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে রোববার দুপুরে সিলেটে আরেক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেখানে গাফফার ওই কলেজছাত্রীকে তার বাবা-মাকে ফোন করে বলতে বলেন যেন তারা এ বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা না চান। কিন্তু কথা বলার সময় ওই ছাত্রী তার মাকে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলে গাফফার তাকে মারধর করেন। এরপর তারা আরেক প্রাইভেট কারে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন। পথে মানিকগঞ্জে প্রাইভেট কারটি আটক করে র্যাব।