বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারি প্রতিষ্ঠানে মধ্যস্বত্বভোগী তবে কারা

  •    
  • ৭ মার্চ, ২০২২ ১৬:৩৭

ঢাকায় নিত্যপণ্য সরবরাহের জন্য কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চারটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সবজি বিক্রি হয় গ্রিন রোডেরটিতে। সেখানে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে সবজি বিক্রি করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বলছে, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে গ্রামে ১০ টাকার সবজি ঢাকায় ৬০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে তো মধ্যস্বত্বভোগী থাকার কথা নয়। তাহলে সেখানে কেন বেশি দাম- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।

সবজির উচ্চমূল্যের জন্য ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা উঠে এসেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে। নিউজবাংলার পর্যবেক্ষণ বলছে, ‘অতি মুনাফার’ পরও রাজধানীতে যে দামে সবজি বিক্রি হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে তার চেয়ে বেশি দরে।

গত সপ্তাহে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণার কথা তুলে ধরে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে যে সবজির কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা, সেটি ঢাকায় ভোক্তারা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কিনে খান। দামের এই পার্থক্যের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেন তিনি।

তবে সেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বিক্রয়কেন্দ্রে বাজারের চেয়েও বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে দেখা গেল, যেখানে মধ্যস্বত্বভোগীর কোনো স্থান নেই।

ঢাকায় নিত্যপণ্য সরবরাহের জন্য কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চারটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সবজি বিক্রি হয় গ্রিন রোডেরটিতে।

বৃহস্পতিবার এই কেন্দ্রে প্রতি কেজি করলা ১০০ টাকা, টম্যাটো ৫৫ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬৬ টাকা, শালগম ৩৫ টাকা, মুলা ৩৮ টাকা, দেশি শিম ৪৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১১০ টাকা, গাজর ৩৫ টাকা, শসা ৫৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শিমের বিচি ১০০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ টাকা, মিষ্টি আলু ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের প্রতিটি বাঁধাকপি ৩৫ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পাশেই কয়েকটি বাজারে একই পণ্য এই দোকানের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কম বা সমান দামেই বিক্রি হতে দেখা গেল।

খুচরা বাজারে যে সবজি আসে, সেটি কৃষকের মাঠ থেকে মফস্বলে বড় আড়তে, এরপর সেখান থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে আসে। সেখান থেকে তা কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা এলাকায় নিয়ে যান। প্রতিটি স্তরেই ব্যবসায়ীরা মুনাফা করেন, কিছু সবজি নষ্ট হয়, পরিবহন খরচ যোগ হয়।

কিন্তু সরকারি সেই বিক্রয়কেন্দ্রের সবজি ঢাকায় আসতে এতগুলো ধাপ নেই, পরিবহন খরচও সরকারি গাড়িতে করে আসে বলে কম পড়ার কথা। আর হাতবদলে মুনাফার কোনো বিষয়ও থাকার কথা নয়।

তাহলে কেন বাজারের চেয়ে কম মূল্যে সবজি বিক্রি করা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নে বিক্রয়কেন্দ্রর মার্কেটিং সুপারভাইজার মাইনুল ইসলাম দৃশ্যত কোনো জবাব দিতে পারেননি। তিনি নিউজবাংলাকে যা বলেছেন সেটি হলো, ‘এখানে বেশির ভাগ কৃষিপণ্য আসে আমাদের বিভিন্ন মাঠ প্রদর্শনী থেকে। এসব সবজি বিষমুক্ত পদ্ধতিতে উৎপাদন হয়। তাছাড়া জিনিসও ভালো, তাজা, প্রতিদিনই সবজি আসে। সবজির দাম তো বাজারমূল্যের সঙ্গে বাড়ে কমে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রদর্শনীগুলো অনেক দূরে। কোনোটি মুন্সীগঞ্জে, কোনোটি নারায়ণগঞ্জে, কোনোটি পার্বত্য চট্টগ্রামে। আনতে খরচ বেশি পড়ে।’

বিএডিএসের অন্য তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবন, গাবতলীতে। তবে সেগুলোতে তেমন চাহিদা না থাকায় সবজি বিক্রি হয় না বলে জানালেন কর্মকর্তারা।

গ্রিনরোডের বিক্রয়কেন্দ্রটিতেও যে খুব একটা চাহিদা, তেমনটি নয়। প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করেও সেখানে কোনো ক্রেতা আসতে দেখা যায়নি।

পরে একই প্রশ্নে বিক্রয়কেন্দ্রটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির উপসচিব শাহ মোহাম্মদ দিলদার হোসেন বলেন, ‘এখানে অনেক বাছাই করে ভালো মানের সবজি আনা হয়। তবে আমাদের মনে হয় না বাজারের চেয়ে দাম বেশি। আমরা শুধু ৫ শতাংশ লাভে বিক্রি করি।’

বাজারে তো বিভিন্ন হাত ঘুরে সবজি আসে। কিন্তু আপনাদের তো সরাসরি মাঠ থেকে আসে। তাহলে দাম আরও কম হওয়ার কথা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব সময় তো আমাদের বাগান থেকে পাওয়া যায় না। আমাদের কিছু চুক্তিভিত্তিক চাষি আছেন। তাদের কাছ থেকেই সবজি নেয়া হয়।

‘এসব সবজি অর্গানিক উপায়ে চাষ করা হয়। সার ব্যবহারে ফসলের ‍উৎপাদন বেশি হয়। কিন্তু অর্গানিক উপায়ে চাষ করলে ফলন কম হয়। সেচ ভবনে কৃষকের বাজারেও তাজা সবজি পাওয়া যায়, সেগুলোর দামও বাজারের চেয়ে বেশি।’

বাজারে খুচরায় দাম কেমন

বিএডিসির বিক্রয়কেন্দ্রের ১০০ গজ দূরেই গলির মুখে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করছিলেন আয়নাল মিয়া। তিনি লম্বা বেগুন ৫৫ টাকা, গোল বেগুন ৪৫ টাকা, বিচি ছাড়া শিম ৩৫ টাকা, বিচিসহ ৪৫ টাকা দাম চাইলেন। দামদর করলে কিছু ছাড়ও দিচ্ছেন তিনি।

তার দোকানে ফুলকপি ৩৫ টাকা, পাতাকপি ৪০ টাকা, ভালো মানের টম্যাটো ৪০ টাকায় আর একটু পুরোনোগুলো ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেল।

কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারিতে সবজি এনে ভ্যানে করে বিক্রি করেন তিনি। দিনে ২৫০ টাকা ভ্যান ভাড়াও দিতে হয় তাকে।

কারওয়ান বাজারের সবজি বাজারে দেখা যায়, সেখানে খুচরায় বিএডিসির চেয়ে অনেক কম দামে কয়েকটি সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনোটির দাম সমান।

এই বাজারের বিক্রেতা সোলায়মান মিয়া বিচি ছাড়া শিম ৩০ টাকা, বিচিসহ নিলে ৪০, মরিচ ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৫৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।

মন্ত্রণালয়ের গবেষণা

দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে সবজির দাম কেন ঊর্ধ্বমুখী, তা বুঝতে গবেষণা করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সচিব সায়েদুল ইসলাম গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই গবেষণার প্রতিবেদনের ফলাফল জানান।

তিনি সেদিন জানান, ‘সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করতে আমরা একটা গবেষণা করছি। কেন সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আমরা নির্ণয় করতে চাই। কৃষি কর্মকর্তারা ছাড়াও জেলা প্রশাসনকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। গবেষণা শেষে সবজির মূল্যবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণগুলো জানতে পারব। তবে আমরা এ পর্যন্ত যে তথ্যগুলো পেয়ে আসছি তা হচ্ছে সব সময় মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ থাকে মধ্যস্বত্বভোগী।’

তিনি বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে যে সবজির কেজি ১০-২০ টাকা হয়, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সেটা আমরা ঢাকায় ৬০-৭০ টাকায় কিনে খাই। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ।’

এ বিভাগের আরো খবর