বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরচুলায় অভাব ঘুচছে বুলবুলিদের

  •    
  • ৭ মার্চ, ২০২২ ১৩:৫২

বুলবুলি বলেন, ‘ছেলের সংসারে থাকি। নিজের অনেক খরচ আছে। সেগুলা তো আর ছেলে দিতে পারে না। প্রতিবেশীর বাড়িতে পরচুলা বানানোর কাজ দেখে ছয় মাস আগে আমিও ঢুকে পড়ি। নিজের প্রয়োজন এখন নিজেই মেটাই।’

‘পাঁচজনের সংসার হামার। স্বামী যে কামাই করে সেই দিয়ে টানাটানি হয়। ভালোমন্দ খাবার পাই না। ছয় মাস থাকি এইঠে (এখানে) চুলের কাম করিছি। খালি চুল বাছি দিবার (দিতে) নাগে (হয়)।

‘আড়াই হাজার টাকা করি পাই। সংসারোত দিবার পারিছি। কষ্টও কম হয়ছে। এইঠে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো কাজ করি হামরা।’

বলছিলেন নীলফামারীর সৈয়দুপর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারিহাট এলাকার ৩৮ বছর বয়সী জিন্নাতুন নেহা।

৫৫ বছর বয়সী বুলবুলি বেগমের স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। ছেলের অভাব-অনটনের সংসারে থাকেন। নিজের হাতখরচ জোগাতে তিনিও যোগ দিয়েছেন পরচুলা তৈরির কাজে।

বুলবুলি বলেন, ‘ছেলের সংসারে থাকি। নিজের অনেক খরচ আছে। সেগুলা তো আর ছেলে দিতে পারে না। প্রতিবেশীর বাড়িতে পরচুলা বানানোর কাজ দেখে ছয় মাস আগে আমিও ঢুকে পড়ি। নিজের প্রয়োজন এখন নিজেই মেটাই।’

জান্নাতি ও বুলবুলির মতো বেলপুকুর ইউনিয়নের পালপাড়া, সিপাহিটারী ও চৌপথি এলাকার অনেক নারী এখন এই কাজে ব্যস্ত। কেউ চুল বাছাই করেন, কেউ প্রক্রিয়াজাত করেন। এই কাজ করে তারা ২ থেকে ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পান।

পরচুলা বানানোর জন্য চুল বাছাই করছেন নারীরা। ছবি: নিউজবাংলা

পরচুলা বানানোর এই কাজের উদ্যোক্তা মুকুল মিয়া জানান, তার মতো আরও তিন থেকে চারজন এই এলাকায় পরচুলা বানানোর ফ্যাক্টরি দিয়েছেন। ঢাকা থেকে তারা অর্ডার পান। স্থানীয় নারীদের দিয়ে বানানো পরচুলা আবার ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।

মুকুল বলেন, ‘এলাকার ৭ থেকে ৮ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু আমার কয়েকটি ফ্যাক্টরিতেই ২ হাজার নারী কাজ করেন। এলাকার পুরুষরা অধিকাংশই দিনমজুর। নারীরা সংসারের কাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময় ফাঁকা থাকেন। এ সময়টা তারা পরচুলা বানানোর কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা আনছেন।’

সাবকন্ট্রাক্ট নিয়ে নিজের বাড়িতে পরচুলা বানানোর ছোট ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছেন মর্জিনা বেগম। বাড়ি ভাড়াবাবদ পান ৫ হাজার টাকা এবং ফ্যাক্টরি দেখাশোনার জন্য ৩ হাজার টাকা।

মর্জিনা বলেন, ‘আমার স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওভাবেই রিকশা চালান। বড় মেয়ে রংপুরে নার্সিংয়ে পড়ে। আমার টাকা দিয়ে এখন তার খরচ চালাই। পাশাপাশি সংসারের খরচ মেটাই। এখনা আমাদের টানাটানি কমেছে।’

সাগরিকা পরচুলা বানানোর কাজ করে আয় করেন ৬ হাজার টাকা। বলেন, ‘একজনের টাকায় সংসার চালানো কঠিন। এখন আমিও সংসারে টাকা দিতে পারি। আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।’

নারীদের এই আয়ে খুশি এলাকার পুরুষরা। স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বেলপুকুর ইউনিয়নের পুরুষরা প্রায় সবাই শ্রমিক-দিনমজুর। তারা দিন আনে, দিন খায়। এখন এলাকার ৭ থেকে ৮ হাজার নারী এখন পরচুলা বানানোর কাজে জড়িত। এই কাজে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।’

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করে নীলফামারী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি ফরহানুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নীলফামারীতে উত্তরা ইপিজেড হওয়ায় এই এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উৎপাদনমুখী অনেক ফ্যাক্টরি হয়েছে। এর ফলে এখানে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটেছে।

‘নারীরা আগে বাড়ির কাজ শেষে যে সময়টা বসে থাকতেন, সে সময়টা অর্থনৈতিক কাজে দিয়ে লাভবান হচ্ছেন। নারীদের কাজের সুযোগ তৈরিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশের জন্য চেম্বার পাশে থাকবে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা বেগম বলেন, ‘এখন আর কেউ শুধু গৃহিণী থাকতে চান না। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে। নারীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন। নারীদের মধ্যে থেকেও উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। বিসিক বিভিন্নভাবে নারীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর