রাজশাহী শহরে যাতায়াতের প্রধান বাহন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। হাজার হাজার অটোরিকশায় চার্জ দিতে মহানগর ও এর আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্যারেজ। অনিরাপদভাবে গড়ে তোলা এসব গ্যারেজে অটোরিকশা চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎঝুঁকি।
গ্যারেজগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এলোমেলো পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কোথাও কোথায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড। এরপরও গ্যারেজের বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই মালিক ও সংশ্লিষ্টদের।
রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক সমিতির তথ্য থেকে জানা গেছে, নগরীতে অন্তত ১০ হাজার অটোরিকশা ও ৫ হাজার রিকশা চলাচল করে। এসব রিকশার গ্যারেজ রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ। এসব যানে একবার পুরো চার্জ নিতে গ্যারেজগুলো নেয় ১৮০ টাকা। গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা চার্জ দিতে হয় প্রতিটি অটোরিকশায়।
রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর অধিকাংশ অটো গ্যারেজই তৈরি করা হয়েছে টিনের ছাউনি ও বেড়ায়। ভেতরে তার পড়ে আছে এলোমেলোভাবে। কোনো কোনো পয়েন্ট লেগে আছে টিনের সঙ্গেই। টিনের বেড়াতে ঝুলছে তারের জঞ্জাল। একটি অটোর সঙ্গে অন্য অটো লাগানো। সেখানেও রয়েছে কাটা ছেড়া তার। নেই শক্ত কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
বেশির ভাগ গ্যারেজই গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। ফলে অনেক সময় ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও সেগুলো সামনে আনেন না এর মালিকরা।
১ মার্চ রাজশাহী নগরী সপুরা কয়েরদাঁড়া এলাকার একটি অটোরিকশার গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন পুরো গ্যারেজে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পুড়ে গেছে ৪৭টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
গত বছরের ২০ আগস্ট বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শান্ত নামে যুবকের মৃত্যু হয় একটি গ্যারেজে। নগরীর হড়গ্রাম এলাকার একটি গ্যারেজে মারা যান তিনি। শান্ত গ্যারেজে অটোরিকশায় চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান।
রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রায়ই বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও একটি ছেলে মারা গেছে। প্রায় এগুলো ঘটছেই। হয়তো কেউ বেঁচে যাচ্ছে, কেউ মারা যাচ্ছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদারকি।’
নগরীতে অল্প কিছু গ্যারেজে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে বলে জানান তিনি। বেশির ভাগই তৈরি টিনের ছাউনি ও বেড়ায়।
তিনি বলেন, ‘অনিরাপদ বেশির ভাগ গ্যারেজ অবৈধভাবেই চলছে। আমাদের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে দাবি করেছি, গ্যারেজগুলোকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আনতে। সিটি করপোরেশনের আওতায় এলে তাদের অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারব। তাহলে এই দুঘটনা ঘটবে না। অনেকে কিছুই জানে না একটা গ্যারেজ করে বসে আছে।’
এসব গ্যারেজে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোর রাজশাহী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা মিটারে সংযোগ দেয়া পর্যন্ত দেখি, ভেতরে ওয়ারিং কী অবস্থা বা কীভাবে চার্জ দিচ্ছে সেগুলো আমরা দেখি না। তবে ঠিকভাবে যাতে তারা নিয়ম মানেন, সে বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়।’
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ-সাইদ বলেন, ‘আমরা গ্যারেজগুলো নিবন্ধন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেক গ্যারেজ মালিকই আসছে না। আমাদের এখানে যেসব গ্যারেজ মালিক লাইসেন্স নিয়েছে, তার সংখ্যা খুব কম।’
তারা বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন বলেও জানান।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যারেজগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এগুলো নিয়ে প্রচার করব এবং অভিযান চালাব।’